প্রধান মেনু

অবশেষে পাইকগাছা থানার ওসি আমিনুলের হস্তক্ষেপে অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত হলো বৃক্ষ মানব আবুল বাজনদার

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ॥ অবশেষে পাইকগাছা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের হস্তক্ষেপে অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত হলো বৃক্ষ মানব আবুল বাজনদার ও তার পরিবার। ওসি’র সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিপক্ষ নজরুল ইসলাম যাতায়াতের পথ ছেড়ে দেওয়ায় সোমবার নতুন ইট বিছিয়ে যাতায়াতের পথ তৈরী করে নিয়েছেন আবুলের পরিবার। উল্লেখ্য, পাইকগাছা পৌরসভার সরল গ্রামের মানিক বাজনদারের ছেলে বিরল রোগে আক্রান্ত আবুল বাজনদার ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে সরকারি তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেডিকেল টিমের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডাঃ কবির চৌধুরী জানতে পারেন আবুলের বসবাসের জন্য কোন জায়গা জমি নাই।

এ জন্য তিনি জমি কিনে বাড়ী করার জন্য আবুলকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন। চিকিৎসকের আর্থিক সহায়তা পেয়ে আবুল ২০১৬ সালের জুন মাসের দিকে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সরল মৌজায় শিক্ষক মাখন লাল গংদের নিকট থেকে ২টি কোবলা দলিল মূলে এস,এ ৬৩০ দাগ সহ ভিন্ন দাগে প্রায় ১১ শতক জমি ক্রয় করে কোন রকমে বসত বাড়ী তৈরী করে নতুন এ বাড়ীতে গত ৩ মাস বসবাস শুরু করেন। কিন্তু বাড়ী হতে রাস্তায় ওঠার যাতায়াতের কোন পথ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েন আবুল ও তার পরিবার। তার জমির পাশের প্রতিবেশী প্রতিপক্ষ নজরুল ইসলাম যাতায়াতের পথে একটি খুবড়ে ঘর তৈরী করায় অনেকটাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন আবুলের পরিবার।

বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ স্থানীয় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন আবুল। অবরুদ্ধ থেকে মুক্তি পেতে আবুল সবশেষে গত বুধবার শরণাপন্ন হন থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের। বিষয়টি ওসিকে অবহিত করলে তিনি আবুলের পাশে এসে দাড়িয়ে যাতায়াতের পথ উদ্ধারে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেন। ওসি’র হস্তক্ষেপে প্রতিপক্ষ নজরুল পথের উপর তৈরী করা খুবড়ে ঘরটি রোববার সরিয়ে নিলে সুগম হয়ে যায় আবুলের যাতায়াতের পথ। গত দু’দিনে আবুল পথে নতুন ইট বিছিয়ে যাতায়াত শুরু করেছেন। শেষমেষ ওসির বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণে আবুল ও তার পরিবার অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত হলো। ওসি আমিনুলের হস্তক্ষেপে বৃক্ষমানব ও তার পরিবার অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত হওয়ায় সোমবারের মাসিক আইন শৃংখলা সভায় তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে আবুল বাজনদার জানান, যাতায়াতের পথ নিয়ে আমি ও আমার পরিবার অনেকটাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি। পথ উদ্ধারের ব্যাপারে এলাকার এমন কেউ নাই যে তাদের কাছে যাই নি। অবশেষে ওসি স্যার আমার পাশে এসেদাড়িয়ে ছিলেন এবং স্যারের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে আমার পরিবার অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত হয়েছি। আমরা ওসি স্যারের নিকট চির কৃতজ্ঞ। এ ব্যাপারে মিডিয়াও আমার পাশে ছিল। মিডিয়ার কারণে আমার চিকিৎসার যেমন সু-ব্যবস্থা হয়েছে, তেমনি যাতায়াতের পথ উদ্ধারের ব্যাপারেও মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, বৃক্ষমানব ও তার পরিবার অত্যান্ত অসহায়।

তাদের বসবাসের কোন স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আবুল একজন মানুষের সহযোগিতায় পৌরসভার মধ্যে সামান্য কিছু জমি কিনে বসতবাড়ী নির্মাণ করে। কিন্তু যাতায়াতের পথ না থাকায় তার পরিবার চরম বিপাকে পড়েন। বিষয়টি আমাকে জানানোর পর মানবিক দিক বিবেচনা করে তার যাতায়াতের পথ উদ্ধারের ব্যাপারে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি। মিডিয়া সহ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আবুল ও তার পরিবারকে একটি সুন্দর যাতায়াতের পথ উপহার দিতে সক্ষম হয়েছি।

এটা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। সমাজের সবাই যদি এভাবে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে আসেন, তাহলে একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করা খুব সহজ হয়। আবুল ও তার পরিবার অনেকের মত একটি সুন্দর পরিবেশে বসবাস করবে, সেই সু-ব্যবস্থা করতে পেরে নিজেরও অনেক ভাল লাগছে। এলাকাবাসীর সহযোগিতা পেলে এ ধরণের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে ওসি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব জানিয়েছেন।