বন্ধুদের মতো বাবা ডাকতে চায় শাওন

বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি: সকালের সোনাঝরা রোদে স্কুলের মাঠে বেশ কিছু ছেলে মেয়ে হৈহুল্লোর করছে। মাঠের এককোনে নিশ্চুপ বসে আছে ছোট্ট একটা ছেলে। অনেক কথার মাঝে বললো, ‘‘মোর আব্বু নাই, আব্বু উদিক থাহে (হাত ইশারা দিয়ে)। জানো আব্বুরে ডাকতে ইচ্ছা করে, মোর (আমার) লগের পোলাপাইনগুলারে, অগো আব্বুরা চকলেট, মজা কিইন্না দেয়। মোরে কেউ দেয় না।” কথাগুলো শুনে সংবাদ কর্মীদের বোবা কান্নায় চোখের কোনে পানি জমে।
আর কথাগুলো বলতেছিল, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের সজল মুন্সীর ছেলে শাওন। বয়স সবেমাত্র ৭ বছর, প্রথম শ্রেনীতে পড়ে চন্ডিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ফুটফুটে চাঁদের কনার মতো এক শিশু। কিন্তু অনিশ্চিত অজানা ভবিষ্যতের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘোরা কিংবা কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ওর টোল পড়া গালে যেন বিশাদের নকশীকাথা আকা। সাত বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমায় শাওনের বাবা সজল মুন্সী। দীর্ঘ অর্ধযুগের বেশী হলেও সামান্যতম সময় হয়নি শাওনের খোজ নেয়ার। স্কুল থেকে একটু দুরের বাড়ীতে খুজে পাওয়া গেল শাওনের কর্মজিবী মা নাহারকে। তার বয়স কেবল বিশের কোঠা পার করে ২২ চলছে। পেটের দায়ে এর আগে গার্মেন্টেসে চাকরি করেছেন, এখন অন্যের বাড়ীতে কাজ করে শিশু শাওনের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দেয়।
তিনি জানান, বছর দশেক আগে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে উনি (শাওনের বাবা) দাড়াইয়া থাকতো, ডাকাডাকি করতো, সাড়া না দিলে আজেবাজে কথা বলতো। অসহায়ের মতো একদিন তার প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হই। বিয়ে করার প্রলোভন দিয়ে শারীরীক সম্পর্ক গড়ে তুললেন। আমি অন্ত:সত্তা হয়ে পড়ি, সবাই জানাজানি হয় আমাদের সম্পর্ক। কিন্তু উনি আর উনার পরিবারের লোকেরা বাচ্চা নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকে। এক সময় আমার কোল জুড়ে আসে শাওন। এলাকার গন্যমান্য লোকেরা স্থানীয় কাজী সালাহউদ্দিন ভুইয়াকে দিয়া বিয়া পরাইয়া দেয়।”
কিন্তু কিছুতেই এসম্পর্ক মেনে নিতে পারছিলেন না সজল মুন্সীর বড় ভাই, এলাকার গুটিবাজখ্যাত মানিক মুন্সী ও তার পরিবার। সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে সুকৌশলে সজল মুন্সীকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়ে দেয় মানিক মুন্সী। মানিক মুন্সীর অপকৌশলের জয়ে হেরে যায় ফুটফুটে শিশু শাওনের অনাগত ভবিষ্যৎ পথচলা। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সত্তার বেপারী, চন্ডিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল রব হাওলাদার, ইউপি সদস্য আবুল বাশার (খোকন আকন), সাবেক ইউপি সদস্য মুজাম্মেল হোসেন রাঢ়ী, হুমায়ুন চৌধুরী শালিস বৈঠক করে মানিক মুন্সীকে শিশু শাওনের দুবেলা দুমুঠো ভাতের আর থাকার ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে বলেন। কিন্তু শিশু শাওনের জন্য সবই যেন শুভংকরের ফাকি। এক নির্মম অসহায় মানবেতর জীবনযাপন করছে শিশু শাওন ও তার মা। অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, শিশু শাওনকে একাধিকবার হত্যার পরিকল্পনা করেছিল চাচা মানিক মুন্সী। এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা শিশু শাওনের জীবন বাচাতে জেলা প্রশাসক, মানবাধিকার সংস্থাসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।