প্রধান মেনু

শ্রীপুরের প্রশাসন জামিনার করুন আর্তনাদের মূল্য দিবে তো?

ইব্রাহিম মাহমুদ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি।। ‘আমগরে দেহুনের কেউই নাইগা। বিচার করবো কেডা, ঘর ভাইংগা দিতাছে হেইডা কেউই দেহে না। সরকারের কাছে বিচার চাই। আমনেরা দেহুইন কিছু করতারুইন নাহি।
আল্লার কাছেও বিচার দিছি’ আমগর দেওয়া বিচার একদিন পাইয়াম”—কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই বলছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামের মৃত শুক্কুর আলীর স্ত্রী প্রায় শতবর্ষী জামিনা খাতুন।
স্বামী মারা যাওয়ার পর নাতী-নাতনি নিয়ে এখানে প্রায় ৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন জামিনা। ছেলে দিনমুজুর, দিনে যা রুজগার করেন তা দিয়েই টেনে-টুনে কোনমতে চলে ৯ সদ্যসের সংসার। পৈত্রিক সম্পত্তি হিসাবে ভিটামাটি-সহ দু’টো মাটির ঘরই তাদের একমাত্র সম্বল। এ নিয়েই দু:খমাখা সুখে ভালোই চলছিল তাদের জীবন।
দু’টো মাটির ঘরে গাদগাদি করে থাকতো তারা। সেই সম্বলটুকুর উপরেও নজর পরেছে কতিপয় ভুমি দুস্যদের। তাদের অত্যাচারে ঐ পরিবারসহ আরেকটি পরিবারও ভিটা মাটি হারানোর আতঙ্কে রয়েছে বলে জানা যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবরে ভুক্তভোগীদের দেয়া অভিযোগসুত্রে জানা যায়, পাওয়ার ম্যান কোম্পানীর নামমাত্র ওয়াল দিয়ে বালি ভরাটের ফলে তার পানি গিয়ে ঘরবাড়ী নষ্ট হচ্ছে এবং বালির চাপে মাটির দেয়াল ভেংগে যাচ্ছে।
জামিনার মেয়ে পঞ্চাশোর্ধ রাজিয়া জানান, স্থানীয় সুমন মিয়া কতিপয় ব্যক্তিদের সহায়তায় পাওয়ার ম্যান নামক কোম্পানির কাছে জমি বিক্রির জন্য বলেছিল। আমরা শেষ সম্বল ভিটামাটি ছাড়তে না চাওয়ায় তারা নানা কৌশলে তা দখল করার চেষ্টা করে। নদী থেকে পানিসহ বালি এনে স্তুপ করার ফলে বালির পানি এসে আমাদের ঘরের মাটির দেয়াল ধসে যায়। অনেক দিন বলার পরেও তারা আমাদের কথার কোন কর্নপাত করে না।
আরেক ভুক্তভোগী হালিমা জানান, আমার স্বামী রিক্সা চালিয়ে যা উপার্জন করে তা দিয়ে কষ্টে আমরা চলি। আমাদের ঘর পড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের বাড়িতে রাত্রী যাপন করতে হয়। আমরা চেয়ারম্যান, মেম্বারের কাছে কোন বিচার পাই না। তারা ইউএনও ও থানায় যাইতে বলে, সেখানেও গেলাম কিন্তু কোন লাভ হলো না। এখন আমরা কোথায় যাব।
স্থানীয় মনু গার্ড জানান, কোম্পানীর বালুর ড্রেজারে ওই দুই পরিবারের ঘর বাড়ী শেষ। অনেক বার কোম্পানীর দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তারা কোন ফল পাচ্ছেনা। এই অসহায় পরিবারের ঘর নির্মানের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবী করছি।
এ বিষয়ে সুমন মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি গত এক বছর আগে ২০ লাখ টাকা প্রতি বিঘা দরে যা হয় সে টাকায় তাদের ওই জমি কিনতে চাইছিলাম। তারা দেয়নি। এখন আবার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দিছে। তাই পরিষদ এখন ফয়সালা দিবে।
গোসিংগা ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি ছালাউদ্দিন টিপু জানান, ভুমি দস্যুদের দৌড়াত্বে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ট। অসহায় ওই দুই পরিবারের ঘর ভাঙ্গার ক্ষতিপুনের ব্যাপারে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অনেকবার চেষ্টা করলেও কোম্পানীর লোক প্রভাবশালী হওয়ায় কোন প্রকার কর্নপাতই করে নি।
ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অপারগতা জানিয়ে গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল হোসেন বেপারী জানান, তাদের জমিতে তারা বালি ফেলছে। এ বিষয়ে চেযারম্যান ও ইউএনও কাছে অভিযোগ রয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবে। জমি কেনা বেচার সাথে তার কোন যোগসূত্র নাই বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে পাওয়ার ম্যান কোম্পানীর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সারোয়ার হোসেন জানান, কোম্পানীর জায়গায় মজিবুর নামে এক ব্যক্তি ইট, বালু ও খোয়ার কন্টাক নিয়েছে। তিনি কিভাবে বালু ফেলবেন সেটা উনার বিষয়। এছাড়াও এখানে ফেলা বালুর পানি ঐ মাটির ঘরে যায়নি। বরং তাদের পানি আমাদের এখানে আসছে।
গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান সরকার জানান, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেখানে দেখা গেছে, পাওয়ার ম্যান কোম্পানীর বালুর পানিতে ওই পরিবারের ঘরগুলো ভাংছে। তাদেরকে কয়েকবার নোটিশ করার পরও তারা আসছেনা। তারা ভুক্তভোগীদের মামলা দেয়ার কথা বলে। এরা নীরিহ লোক মামলায় কেন যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি দেখার জন্য স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যায় ভাবে কারো জমি দখলের চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।