শৈলকুপায় প্রধান শিক্ষকসহ ৫ শিক্ষক লাঞ্ছিত, মানববন্ধন ও বিক্ষোভসহ লাগাতার কর্মসূচীর হুশিয়ারী শিক্ষার্থীদের

শামীমুল ইসলাম শামীম,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ঃ ঝিনাইদহের শৈলকুপার হাটফাজিলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসহ ৫ শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কুমিড়াদহ গ্রামের মৃত সমশের মোল্লার তৃতীয় পুত্র তোফা মোল্লা। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুরে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস রুমে। এ ঘটনায় আহত শিক্ষকরা প্রাথমিকচিকিৎসা শেষে লজ্জায় বাড়ীতেই অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপানন্দ কুমার মন্ডল, সহকারী শিক্ষক শ্যামল বিশ্বাস, আজিজুল ইসলাম, উত্তম কুমার অধিকারী ও আবুল বাশার। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের আয়া রাশিদাকেও এই সভাপতি লাঞ্ছিত করেন বলে জানা গেছে। অত্যাচারি সভাপতির বিচারের দাবীতে হাটফাজিলপুর বাজারে পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।বিক্ষোভকারিরা তোফার বসবাসরত বিশ্বাস বির্ল্ডাসের হাটফাজিলপুরের তিনতলা বাড়িটি কিছুক্ষন ঘেরাও করে রাখে।উত্তেজিত শির্ক্ষাথীরা বাড়িতে হামলা চালিয়ে কয়েকটি বিল্ডিংয়ের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে।পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।
প্রতিবাদে ও বিচারের দাবীতে মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাশ বর্জন ও পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে হাটফাজিলপুর বাজার অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভ কারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সভাপতির ক্যাডার বাহিনীরা হামলা চালায় বলে জানা যায়। এবং লাঞ্ছিত শিক্ষকদের বাড়ীও অবরুদ্ধ করে রাখে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেনের ক্যাডার বাহিনী। খোজ নিয়ে জানা গেছে, তোফাজ্জেল হোসেন অরফে তোফা মোল্লা বছর দেড়েক হলো হাটফাজিলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই দায়িত্বে অবহেলা,বিদ্যালয়ের অর্থলোপাট, শিক্ষকদের সাথে অসদারচণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তোফা বিশ্বাস বির্ল্ডাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ নজরুল ইসলাম দুলালের দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড।তিনিই তোফাকে সভাপতির আসনে বসিয়েছিলেন যানা যায়।অনেকে তখন বাধাও দিয়েছিল,কিন্তু কোন কাজ হয়নি।এই তোফা হাটফাজিলপুর বাজার থেকে বিভিন্ন জিনিষ ক্রয় করে টাকা দেন না।কাচা বাজার,মাছ,মাংস,মদিখানার দোকানদারদের নিকট থেকে বিভিন্ন পন্য ক্রয়সহ এমনকি সিগারেটের দোকান থেকেও ব্যান্সন সিগারেট ক্রয় করে টাকা দেন না কোন দিনও।তার হাতথেকে আওয়ামীলীগ সমর্থনকারি হিন্দু সপ্রদায়ের ব্যবসীদেরও বাকি দিতেহয়। আওয়ামীলীগের ক্যাডার বলে কথা,তার উপর বিশ্বাস বিল্ডার্স এর প্রধান ক্যাডার।বিশ্বাস বির্ল্ডাসের চারতলা বিশিষ্ট হাটফাজিলপুরের মার্কেটসহ বাড়ির তিনতলায় থাকেন এই তোফা।
হাটফাজিলপুর বাজার এলাকায় মাদকের রমরমা ব্যবসার নিরাপদ রুট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এই তোফা। তিনি একজন শুধু মাদক ব্যবসায়িই নন মাদক সেবকও বটে।প্রতিদিনের নেশার টাকা জোগাড় করতে হয় তাকে।ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেলাল বিশ্বাসকেউ তোফার নেশার টাকা দিতে হয়।এলাকায় গড়ে তুলেছে মাদক বেচা-কেনার বিশাল এক সিন্ডিকেট। লাঞ্ছিত শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানায়, সোমবার দুপুরে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন মোল্লা প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিনও রাগান্বিত ও নেশা অবস্থায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এরপর মিটিংএর কথা বলে প্রধান শিক্ষকের অফিস রুমে সকল শিক্ষকদের ডেকে পাঠায়। সভাপতি অন্যান্য দিনের ন্যয় শিক্ষকদের কাছে হাত খরচের টাকা দাবী করেন।
কিন্তু টাকার পরিমান বেশী হওয়ায় শিক্ষকরা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। মুহুর্তেই সভাপতি তোফা মোল্লা রেগে গিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের চর থাপ্পর, লাথি ঘুষি ও ঘাড়ে ধাক্কা মেরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এসময় তিনি কোমর থেকে ছুরি বের করে শিক্ষকদের হত্যার হুমকি দিয়ে ঘটনার বিষয়ে মুখ না খুলতে হুমকি দেয়। সেসময় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ভয়ে দ্বিক-বিদ্বিক ছুটাছুটি শুরু করে। সভাপতি জোর পূর্বক প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে একটি ব্যাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরে জনতা ব্যাংক হাটফাজিলপুর বাজার শাখা থেকে বিদ্যালয়ের একাউন্ট ব্যালেন্স জেনে টাকার অংক বসিয়ে তা উত্তোলন করেছে বলে শিক্ষকরা জানায়।
তবে টাকার পরিমান ৩০ হাজার না ১৮ হাজার সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক উপানন্দ কুমার মন্ডলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ভয়ে মুখ খোলেননি। কাতর কণ্ঠে বলেন অন্য শিক্ষকদের কাছে ও আশপাশের লোকের কাছে শোনেন, সব জানতে পারবেন। যদি আমি ঘটনার বিষয়ে মুখ খুলি তাহলে বোঝেনই তো হিন্দু মানুষ বলে কথা। বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন ও আজিজুল মাস্টার বলেন, তোফা মোল্লা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার পর থেকেই শিক্ষকদের জিম্মি করে সকল অর্থ লোপাট করে চলেছে। তিনি বেশীরভাগ সময়ই নেশাগ্রস্থ্য হয়ে কোমরে ছুরি নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। ছাত্র-ছাত্রীরা পর্যন্ত তোফা মোল্লার আচরনে ভীত।তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, শিক্ষকরাই সকল টাকা পয়সা খেয়ে ফেলে। ঠিক মতো ক্লাশ করায় না। তাই শিক্ষকদের একটু বকাঝকা ও শাসন করেছি। শিক্ষকদের লাঞ্ছিতের ঘটনার সুষ্ঠ বিচার না হলে ক্লাশ বর্জন, অনশন ধর্মঘট, মানববন্ধন ও বিক্ষোভসহ লাগাতার নানা কর্মসূচী চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পরে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন সভাপতিকে আটক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।
হাটফাজিলপুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এস,আই খাইরুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সকাল থেকেই স্কুলের আশপাশে পুলিশ অবস্থান করছে। শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উসমান গনি জানান, ঘটনাটি তিনি লোকমুখে শুনেছেন, লাঞ্ছিত শিক্ষকরা তাকে জানায়নি। শিক্ষক লাঞ্ছিত করার মতো ঘটনা খুবই লজ্জাজনক। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।