অবৈধ দখলদারদের কারনে ঝুঁকিতে চৌহালীসহ সিরাজগঞ্জের ৭৮ কিঃ মিঃ বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ

চৌহালী(সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ-সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সীমান্ত বাজার থেকে সিরাজগঞ্জসদর,বেলকুচি,চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার হাট পাঁচিল পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অধিকাংশ এলাকা অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে যাওয়ায় পুরো বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধের ওপর এবং বাঁধের দু’পাশে অন্ততঃ ১৫ হাজার ঘরবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে তোলায় বাঁধের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। বছরের পর বছর অবৈধ দখলে থাকায় বাঁধের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ঘরবাড়ি থাকায় অনেক দূর্বলস্থান মেরামত করা সম্ভব হচ্ছেনা। এর মধ্যে বর্ষাকাল সমাগত।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এ নিয়ে দুঃচিন্তাগ্রস্ত হলেও জনবলের অভাবে উচ্ছেদ অভিযান থমকে গেছে। বাঁধের অনেক স্থানে প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে প্লট আকারে বিক্রি করে দিলেও কোন পদক্ষেপই নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। যে কারণে দিন দিন বাঁধের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়ছে। পানি উন্নয়ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলছড়ি থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার হাট পাঁচিল পর্যন্ত ২১৭.৩৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার ঢেকুরিয়া বাজার থেকে শাহজাদপুর উপজেলার হাট পাঁচিল গ্রাম পর্যন্ত বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনস্ত সিরাজগঞ্জ পরিচালন ও সংরক্ষণ বিভাগ।
গত এক যুগেরও বেশী সময় ধরে বাঁধের বিভিন্ন জায়গা দখলে নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বসবাস শুরু করে। পরবর্তীতে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবার বাঁধের পাশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেয়। এ সুযোগে প্রভাবশালী চক্রটি বাঁধের দু’পাশে এবং হুকুম দখল করা জায়গা দখল নিতে শুরু করে। সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বেলকুচি,চৌহালী ও শাহজাদপুর এলাকার বাধের দূ’পাশ দিয়ে কাচা,আধা পাকা ঘর তুলে জায়গা দখলে নেয়া হচ্ছে।
দখলে নেয়া ব্যক্তিরা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছ থেকে তারা দখল কিনে নিয়েছেন এবং পরিবারের প্রয়োজনে বেড়া ও পাইলিং দিয়ে আরও ঘরবাড়ি উঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ওই প্রভাবশালীরা প্লট আকারে বেড়া দিয়ে নিজেরা মালিক সেজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হুকুম দখল করা জায়গা বিক্রি করে দিচ্ছে। চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগতরা কমমূল্যে জায়গা পেয়ে ঘরবাড়ি তুলেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সবই জানেন কিন্তু বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছেন না। এভাবেই অবৈধ দখলদারদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে অন্ততঃ ১৫ হাজার অবৈধ ঘরবাড়ি বাঁধের উপর ও উভয় পাশে গড়ে ওঠেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম ও এসডিই মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, পুরো বাঁধ জুড়ে অবৈধ দখলদারদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে ওঠায় অনেক জায়গা দুর্বল হয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে আসন্ন বর্ষায় মূল বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে দুঃশ্চিন্তা রয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরীর কাজ করা হচ্ছে। যারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা প্লট করে বিক্রি করেছেন তাদেরও তালিকা করা হচ্ছে। কিছু এলাকায় অবৈধ দখরদারদের নোটিশও দেয়া হয়েছে। অনেক প্রভাবশালীর গ্রামে ঘরবাড়ি রয়েছে। তারপরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে ঘরবাড়ি-দোকানপাট তুলে ভাড়া দিয়েছেন। দ্রুতই এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। #১৬-৪-১৮
« সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের বসত ভিটা সংরক্ষণ জরুরী প্রয়োজন॥ (পূর্বের খবর)