প্রধান মেনু

বর্তমানে প্রবীণদের উন্নয়নের বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রবীণদের সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘ ১৯৯১ সাল থেকে ১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে & quot;Celebrating Older Human Rights Champions" বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। প্রবীণদের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াসে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ‘৯০ এর দশকেই সরকার প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকায় প্রবীণদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও প্রবীণ নিবাস এবং তৎকালীন পাঁচটি বিভাগীয় শহরে প্রবীণদের জন্য বিশেষ ক্লিনিক স্থাপন করে।

১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে প্রণীত বয়স্ক ভাতা কাh©ক্রম প্রবীণদের জন্য এখন পh©ন্ত সরকারের সবচেয়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। সারাদেশের চার লাখ প্রবীণের জন্য প্রতিমাসে ১০০ টাকা হিসেবে ভাতা প্রদানের যে কর্মসূচির আওতা ও অর্থের পরিমাণ ধারবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪০ লাখ বয়স্ক ব্যক্তির জন্য জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ২৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ‘জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩’- এর আওতায় বাংলাদেশের ষাটোর্ধ্ব প্রত্যেক নাগরিক প্রবীণ হিসেবে গণ্য হবেন এবং তাদেরকে রাষ্ট্রের ‘সিনিয়র সিটিজেন’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

‘সিনিয়র সিটিজেন’ হিসেবে তারা বিশেষ পরিচয়পত্র পাবেন এবং সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহে বিভিন্ন সেবার অধিকারী হবেন। পর্যায়ক্রমে সরকার তাদের জন্য অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও নিশ্চিত করবে। ‘মাতা-পিতার ভরণ-পোষণ আইন ২০১৩’ সরকারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এই আইনের আওতায় সন্তান বা সন্তানগণ মাতা-পিতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করবেন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন এবং তাদের সাথে একত্রে বসবাস করবেন। চাকুরির কারণে দূরে থাকতে বাধ্য হলে মাতা-পিতার নিয়মিত খোঁজখবর রাখবেন। মাতা-পিতার ইচ্ছার বিরূদ্ধে কখনোই তাদেরকে কোনো বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো যাবে না। এই আইন ল•নকারী ব্যক্তি অনুর্ধ্ব এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাস কারাদণ্ড ভোগ করবেন।

ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবীণদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তাদের প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যে কোনো জাতির জন্য একটি বিশাল সম্পদ। এই সম্পদকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে এবং এর যথোপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে। এতে পরবর্তী প্রজন্ম যেমন সমৃদ্ধ হবে তেমনি প্রবীণরা সমাজে তাদের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে শেষ জীবনে একটি আনন্দময়, নিশ্চিত জীবনযাপন করতে পারবেন। বর্তমানে যৌথ পরিবার প্রথায় যে ভাঙন দেখা দিয়েছে তা রোধ করতে পারলে প্রবীণ বয়সের একাকীত্ব অনেকটাই দূর হবে।

একাকীত্বের অনুষঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন রোগ ব্যধিকেও এর মাধ্যমে দূরে রাখা সম্ভব হবে। শুধু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নয়, ব্যক্তিগত উপলব্ধি ও আচরণ প্রবীণদের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। ইসলামধর্মে প্রতিটি আত্মনির্ভরশীল সন্তানের ওপর মাতা-পিতার ভরণ-পোষণকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই বিধান মেনে চললে প্রবীণ ব্যক্তিরা নিজেদেরকে আর সমাজের বোঝা হিসেবে মনে করবেন না।

কাজ মানুষকে গতিশীল রাখে। প্রবীণরা যেহেতু বয়সের কারণে কম কর্মোক্ষম বা সরাসরি উৎপাদনশীল কাজের সাথে নিজেদের হয়তো জড়িত করতে পারেন না, তাই তারা যাতে সৃজনশীল, আনন্দদায়ক, হালকা বা সহজ এবং পাশাপাশি বিশ্রাম নিতে পারেন, সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রবীণ বা বৃদ্ধ কাল আমাদের জীবনেও আসবে। প্রত্যেকের জীবনের এটি একটি স্বাভাবিক পরিণতি। যৌবনকালে প্রবল প্রাণশক্তিতে ভরপুর কোনো ব্যক্তি যেন এক সময় বৃদ্ধ হয়ে হতাশায় না ভোগেন, অসহায় হয়ে না পড়েন তাদের ত্যাগ ও অবদানের প্রতিদান পান, তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের পাশাপাশি পরিবার, সমাজ ও সামাজিক সংগঠনসমূহকে এগিয়ে আসতে হবে।