প্রধান মেনু

সর্বোচ্চ উৎপাদনেও নিয়ন্ত্রণে নেই লোডশেডিংসেহরি-ইফতারের সময় অতিষ্ঠ জনগণ

রমজানের শুরুতেই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে বিপাকে পড়েছে জনগণ। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেহরি ও ইফতারের সময়ও বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দিনের বড় অংশ বন্ধ থাকছে শিল্প কারখানাও। এরই মধ্যে রমজানের আগের দিন গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। ওই দিন ১০ হাজার ৮২৫ মেগাওয়াট উৎপাদিত হয়ে উপকেন্দ্র পর্যায়ে বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে ১০ হাজার ৩২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
রোজা শুরুর প্রথম দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় এবং মেঘ-বৃষ্টি থাকার কারণে গরমজনিত বিদ্যুতের চাহিদাও ছিল কম। কিন্তু আজ রবিবার থেকে অফিস খুলছে। আবহাওয়া অফিসও আগামী এক সপ্তাহ গরম বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের উৎপাদন না বাড়লে লোডশেডিংয়ে তীব্রতা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারি নথিপত্রে কিংবা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)উৎপাদন রিপোর্টে দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং নেই বলে দাবি করলেও গ্রাহকরা বলছেন ভিন্ন কথা। বরিশাল, নোয়াখালী, পিরোজপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলার লোকজন অভিযোগ করেছেন- রমজানে লোডশেডিং বেড়েছে। এমনকি সেহরি ও ইফতারের সময় লোডশেডিং না করতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও ওই সময়গুলোতেও বিদ্যুৎ থাকছে না। ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধিরাও একই তথ্য জানান।
তবে পিডিবি কিংবা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো এ লোডশেডিংয়ের তথ্য স্বীকার করেননি। তারা বলছেন, চাহিদা বেড়েছে। তাই লোড ম্যানেজমেন্ট করা হচ্ছে, লোডশেডিং নয়। এ ক্ষেত্রে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়।
এদিকে রমজানে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও গ্যাস সংকটে বন্ধ রয়েছে ১১টি কেন্দ্র। গ্যাস-সীমাবদ্ধতায় সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও গত বৃহস্পতি-শুক্রবার দৈনিক অন্তত ১ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎদন করা যায়নি। এই সময়ে সংস্কারে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে আরো ৬টি কেন্দ্র। কারিগরি ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতার কারণে বন্ধ আরো তিনটি কেন্দ্র। তিনটি কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া এক বেলা চালু থাকলে আরেক বেলা বন্ধ রাখতে হয় এমন কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ১০টি। এর মধ্যে ৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরুর কারণে আশা জাগালেও মোট ১১২টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৩টি কেন্দ্র বন্ধ এবং ১০টি কেন্দ্রে ‘আধা চালু থাকা’ অবস্থা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিতরণ সংস্থাগুলোর কর্তাব্যক্তিদেরও।
এ প্রসঙ্গে কয়েকটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) মহাব্যবস্থাপকরা বলেন,উৎপাদন পর্যায় থেকে সরবরাহ না থাকলে বিতরণ পর্যায়ে সংকট পড়ে। এখন তা-ই চলছে। গ্রাম-মফস্বলে এক এলাকায় লোডশেডিং করে অন্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থাকে লোড ম্যানেজমেন্ট আখ্যা দিয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এক সদস্য বলেন, সম্প্রতি দেশে বিদ্যুতের চাহিদা সরকারি ধারণার চেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে। এর মধ্যে দ্রুত সংযোগ সংখ্যা বৃদ্ধির মত সমানতালে বড় ও মাঝারি বিদ্যুৎ কন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। তাই সংকট প্রকট। আরইবি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। বিতরণ পর্যায়ে যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা নিরসন করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সেবা নিশ্চিত করতে সিএনজি স্টেশন বিকাল পাঁচটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে। অতিরিক্ত আলোকসজ্জা না করা, ইফতার ও তারাবির সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ব্যবহার সীমিত রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহারের সময় অর্থাৎ সন্ধ্যায় রি-রোলিং মিল, ওয়েল্ডিং মেশিন, ওভেন, ইস্ত্রির দোকানসহ বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সরঞ্জাম ব্যবহার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুপার মার্কেটে, পেট্রোল পাম্পে, সিএনজি স্টেশনে অতিরিক্ত বাতি ব্যবহার বন্ধ রাখতে এবং ইফতার ও সেহরির সময় শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এসির ব্যবহার সীমিত রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ পদক্ষেপ-নির্দেশনাই ঠিকঠিক পালন হচ্ছে না। ফলে এত পদক্ষেপের পরও লোডশেডিং বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে পিডিবি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। লোডব্যবস্থাপনা এখনও সম্পূর্ণ আধুনিক করতে না পারায় কিছু এলাকায় বিদ্যুত্ বিভ্রাট হতে পারে। তবে এটি থাকবে না। সংস্কারে থাকা কেন্দ্রগুলোসহ নতুন কেন্দ্রে শিগগিরই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, চলতি মাসে এলএনজি জাতীয় গ্যাস গ্রীডে যুক্ত হবে। পাশাপাশি আরো ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডে যুক্ত হবে। ফলে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সমস্যা হবে না।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, সরকার যতই বলুক লোডশেডিং নেই, বাস্তবতা ভিন্ন। জনগণ এ খাতের মিথ্যা ও দুর্নীতির খেসারত দিচ্ছে। সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যতটা উদ্যোগ নেয় ততটা উদ্যোগ এ খাতকে টেকসই করার জন্য নেয় না। ফলে প্রতি বছরই রমজানে লোডশেডিংয়ের সমস্যা বাড়ছে।