আশুলিয়া অবৈধ গ্যাস ব্যবহারে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব

সাঈম সরকারঃ শিল্প এলাকা আশুলিয়ার বিভিন্ন মহল্লায় প্রায় ১০ হাজার আবাসিক বাড়িতে অবৈধ ভাবে গ্যাস ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায়। ইহাতে এই খাত থেকে সরকার হারাচ্ছে প্রায় কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব। মাঝে মধ্যেই দেখা যায় গ্যাস কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রশাসনিক ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করণ অব্যহত থাকলেও থেমে নেই অবৈধ ভাবে গ্যাস সংযোগের কাজ। সকাল বেলা অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে রাতের আধারে পূণরায় আবার অবৈধ গ্যাস সংযোগের মহাউৎসব লেগে যায়। অসাধু কিছু গ্যাস কর্মকর্তা ও নামধারী ঠিকাদারদের সহযোগীতায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এবং এলাকার অসাধু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় থানা পুলিশকে হাত করে এবং মাসে মাসে মাসারা দিয়ে এসব চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। সূত্রে জানায়, ভাদাইল(গণকবাড়ী), জামগড়া(মনি মার্কেট), আশুলিয়া থানার পিছনে, পলাশবাড়ী পশ্চিম পাড়া, কাইচাবাড়ী, নরসিংহপুর, টংগাবাড়ী, দূর্গাপুর, গোমাইল, কাঠগড়া এবং জিরাব ঘোষবাগ, বাগানবাড়ী ও পুকুরপাড় এলাকায় প্রায় প্রতিটি আবাসিক বাড়িতেই রয়েছে অবৈধ সংযোগে অবৈধ ভাবে গ্যাস ব্যবহার। যদি প্রতিটি বাড়ীতে অবৈধ ভাবে গড়ে ১০টি করে ডাবল চুলা থাকে তাহলে ১০ হাজার বাড়ীতে ১লক্ষ ডাবল চুলা রয়েছে। এতে গড়ে প্রতিমাসে সরকারী কোষাগার পাচ্ছেনা প্রায় ৫ কোটি টাকার রাজস্ব।
অবৈধ গ্যাস সংযোগের তথ্য সংগ্রহ কালে জিরাবো এলাকায় ইয়ারপুর ইউনিয়নের ০৮ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি(মেম্বার) আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী এর কাছে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের নেপথ্যে কারা এবং কতগুলো বাড়ীতে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করছে এই মর্মে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক বাংলাদেশকে জানায়, তার একটি নিজ বাড়ী পুকুরপাড় এলাকায় রয়েছে। সেই বাড়িতে বৈধ ভাবে(সরকারী নিয়মে) গ্যাস সংযোগ পাইতে গিয়ে গ্যাস ঠিকাদার ফিরোজকে ১০ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। গোমাইল এলাকায় আরেকটি বাড়ীতে অবৈধ ভাবে গ্যাস সংযোগ পেতে গিয়ে আশুলিয়া থানার সাবেক এ.এস.আই বর্তমানে এস.আই মুকিব(সাভার)কে ৪০হাজার টাকা এবং সংযোগ দানকারীদের আরও ৮০ হাজার দিতে হয়েছে। তিনি আরও জানায়, পুকুরপাড় তার নিজ বাড়ীতে বৈধ সংযোগ নেয়ার সময় ৭নং ওয়ার্ড ইয়ারপুর ইউপি আফজাল হোসেন মেম্বার এবং এলাকার রাজনৈতিক নেতা সহ সকল বাড়ীর মালিকদের বৈধ সংযোগ পেতে আবেদনের তাগিদ দিয়েছিল। কিন্তু কেহই তাহা কর্ণপাত করে নাই। হঠাৎ করে সরকারী ভাবে বৈধ সংযোগ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এমন সময় মোঃ মঞ্জু দেওয়ান ও তার ছোট ভাই সোহেল এবং আরেক পার্টনার আফজাল মেম্বার সমন্বয়ে গ্যাস সংযোগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতি বাড়ীর মালিকদের নিকট থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে।
মেম্বার মোহাম্মদ আলী (অন্যের মাধ্যমে শোনা কথায়) তিনি আরও বলেন, মঞ্জু দেওয়ান ২ লক্ষ টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছে এবং তার ছোট ভাই সোহেল ও আফজাল মেম্বার ঐ টাকার এক অংশ নিজেদের পকেটে তুলেছে। বাদবাকী টাকা দিয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে রাতের আধারে ঘোষবাগ, বাগানবাড়ী ও পুকুরপাড় এলাকায় অবৈধ ভাবে গ্যাস সংযোগ গুলো পাইয়ে দেয়। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে মঞ্জু দেওয়ানকে জানার জন্য গত ১১/০১ ও ১২/০১/১৮ইং তারিখে সংবাদকর্মীগণ তার ব্যক্তিগত অফিসে খুজে না পেয়ে মুঠোফোন নং ০১৭১১৫৪৯৭৮৭ এ যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু ফোনটি বন্ধ থাকায় শত চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। জানাযায়, গত ০৯/০১/১৮ইং তারিখে ঘোষবাগ এলাকায় অবৈধ গ্যাস উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে তখন থেকে তার ফোনটি বন্ধ রয়েছে বলে জানায় ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এদিকে আফজাল মেম্বারকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানায়, অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানে না। এলাকার কিছু অসৎ লোক শত্রুতা বশত তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছে।
তিনি আরও বলেন অবৈধ ভাবে সংযোগ পাওয়া গ্যাস বৈধ করনের জন্য গ্যাস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তার কাছে মোটা অংকের টাকাও দাবী করেছে অনেকে। কিন্তু ঐ ব্যক্তিদ্বয় মিথ্যা (গ্যাস অফিসের) কর্মকর্তা প্রমাণ হওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। এত টাকা দালাল দের দিয়ে অবৈধ ভাবে গ্যাস সংযোগ নিলে আবার সেটাকে উচ্ছেদ করে নেওয়া হয়। এতে আপনাদের কোন প্রভাব পরে ,মকিনা এলাকার বাড়ির মালিকরা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, উচ্ছেদ করলে আর কি করব। দুই তিন দিন কষ্ট হবে মাত্র। যাদের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে গ্যাস সংযোগ পেয়েছি তারাই এসে আবার গ্যাস সংযোগ দিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বর্তমান আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আউয়াল সাহেবকে জানতে চাইলে তিনি জানায় বিষয়টি আমি অবগত নই। আমার জানা মতে থানার কোন পুলিশ সদস্য এই অসৎ কাজের সঙ্গে লিপ্ত নেই, প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিতাস গ্যাসের ম্যানেজার (সাভার জোন) জনাব সিদ্দিকুর রহমানকে জানতে চাইলে তিনি জানায়, আমরা নিয়মিত ভাবে ভ্রাম্যমান আদালতের সহযোগীতায় অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ অভিযান অব্যহত রেখেছি। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রাণনাশক হুমিকর সম্মুখীন হতে হচ্ছে গ্যাস কর্তৃপক্ষের। গত ০৯/০১/১৮ইংতারিখে ঘোষবাগ এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে রাজনৈতিক নেতা পরিচয়ে আমাদেরকে প্রাণনাশের হুমকিদেয়। তাছাড়া গত ২৮/১২/১৭ইং তারিখে তিতাস গ্যাস (সাভার জোন) এর পক্ষে বাদী হয়ে একটি মামলা ও একাধিক মামলাও রয়েছে। -সবচেয়ে বড় কথা হল যারা কিনা রাতের আধারে তরিঘরি করে অবাধে অবৈধ গ্যাস সংযোগ গুলো পাইয়ে দিচ্ছে এই নেপথ্যের নায়ক ও খলনায়ক গুলো কারা জানতে চায় সুশীন সমাজের জ্ঞনী ও গুনীজন। চোখ রাখুন আগামী সংখ্যায়।…………….পর্ব-১