প্রধান মেনু

সমবায় সমিতির নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে সুদের কারবারীদের নয়া কৌশলে রমরমা সুদের ব্যবসা

ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুর জেলা শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে শুরু হয়েছে সমিতির সাইন বোর্ড টানিয়ে সুদের রমরমা ব্যবসা। এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন এলাকায় দোকান ঘড় ভাড়া নিয়ে আবার বাড়িতেই অফিস বানিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে সুধের ব্যবসা। সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায় ফরিদপুর সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পাওয়ার মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি ও শহরের গোয়ালচামট এলাকার ইসা মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটির। একটি সমবায় সমিতির ম্যানেজারের দায়িত্বে আছে আন্ডার ম্যাট্রিক পাশ, ক্যাশিয়ার ৮ম শ্রেনী পাশ আর মাঠ কর্মী ৫ম শ্রেনী পাশ কোথায়ও আবার বাড়ির গৃহীনি এই কাজে ব্যাস্ত।সাইন বোর্ড টানানো  খোজ নিয়ে দেখাগেল সমবায় অধিদপ্তরের এবং সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কোন অনুমোদনই নেই। আবার অনেক সমিতি আছে যাদের কোনো কাগজ পত্রও নেই। এসব সমিতি সাধারন মানুষকে লাভ দেওয়ার কথা বলে প্রতিদিন সঞ্চয় আদায় করছে আর সাধারন মানুষকে ৫হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋন দিয়ে ২৫% থেকে ৩০ % পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে। ঋন দেওয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে সিকিউরিটি হিসেবে রাখছে ব্লাংক ষ্ট্যাম্প, ব্লাংক চেক, জমির দলিল, বাড়ির দলিল। সুধে আসলে টাকা না পেলে এইসব কাগজগুলো দিয়ে শুরু করে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের জন্য চাপ সৃুষ্টি করে।অনেকেই সাংবাদিকদেও জানালেন গরীরমানুষ ঋনের টাকা দিতে না পারায় শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করার মত ঘটনা ঘটাচ্ছে নিয়মিত।

সমিতি পরিচালনার জন্য নিজেদেও বাড়ির লোকজনকে নিয়ে একটি কসড়া ও মনগড়া কমিটি সাজিয়ে নিজেদের পুজি বিনিয়োগ করে চালাচ্ছে রমরমা সুদের ব্যবসা। আরো জানা যায়, ফরিদপুর শহরতলীর আলিয়াবাদ ইউনিয়নের মল্লিকডাঙ্গী গ্রামে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে পাওয়ার মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি নামে একটি সঞ্চয় প্রতিষ্ঠান খুলেছে। সেখানে সাধারন মানুষের কাছ থেকে দৈনিক আদায়ের জন্য একটি বই দিয়ে একাউন্ট খোলা হয়। একই ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে গোয়ালচামট ১ নং সড়কের অনুমোদনহীন ইসা মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি। সঞ্চয় আইনেও অবৈধ ভাবে ঋন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে প্রতিষ্ঠান গুলি। নাই কোন ব্যাংকের মানি লেনদেন অবগত করন কাগজ। ওভার রুল অব ব্যাংক ল’ এর কোন তোয়াক্কাই করেন না তারা। এছাড়া লোন দেওয়ার সময় ষ্ট্যাম্প বাবদ, কম্পিউটার কম্পোজ বাবদ, মোহরী লেখা বাবদ ফি ৯০০ টাকা কেটে রাখে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভূক্তভোগী জানালেন, সুদ যোগ করে যে কিস্তি সাধারন মানুষকে ধার্য করা হয় তা নিয়মিত পরিশোধ করতে না পারলে অশোভন আচরন করে এমন কি বাড়ি জমির দলিল, গহনা নিয়ে আটকে রাখে। বাড়িতে মেয়ে ছেলেদের সাথে গালিগালাজ করে। ইসা মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটির পরিচালক মোঃ ইলিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, আমি এখনও অনুমোদনের জন্য আবেদনই করি নাই। তিনি বলেন, সদস্য সংগ্রহ শুরু করে ঋন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এ বিষয়টি নিয়ে পাওয়ার মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটির পরিচালকের সাথে কথা বলতে গেলে তারা সাংবাদিককে কোনো তথ্য দিবে না বলে জানিয়ে দেয়। অফিসের ম্যানেজার সাংবাদিকদের বলেন যা পারেন লিখেন সমস্যা নাই। আমরা সমবায় অফিসের লোক ম্যানেজ করেই সমিতি চালিয়ে যাচ্ছি। ফরিদপুর সদর উপজেলা সমবায় অফিসার বিরাজ মোহন কুন্ডু সাংবাদিকদেও জানান, আমাদের রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া সকল প্রতিষ্ঠানই অবৈধ। তারা কোন প্রকার কার্যক্রমই পরিচালনা করতে পারবে না। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেন আপনাদের অনুমোদিত সমবায় সমিতির বেশীরভাগই অবৈধভাবে সঞ্চয়ের নামে সুদের ব্যবসা করছে , এটা সম্পর্কে কিছু বলেন ? উত্তওে তিনি জানান আমাদের কাছে নিদ্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই, তাই আমরা বিষয়টা আপনাদের কাছ থেকেই শুনলাম।

বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রভাংশু সোম মহান জানান, অনুমোদন ছাড়া কেই ঋন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। নাম না প্রকাশ করার শর্তে অনেকগুলো সমিতির পরিচালক জানালেন সমিতির সাইনবোর্ড টানিয়ে সুদের ব্যবসা এটাতো এখন প্রতিটি মহল্লায় চলছে এটা আবার কেমন সংবাদ। নামে বেনামে ভুয়া মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি ও এনজিও সাধারন মানুষকে মোটা অংকের টাকা লাভ দেখিয়ে অর্থ কালেকশন করে কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ফরিদপুরে যুবক, নিউওয়ে, প্রাইম মাল্টিপারপাস কোআপারেটিভ সোসাইটির গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ প্রসঙ্গে একাধীক পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে । প্রশাসনের দৃষ্টি আড়াল করে এসব প্রতিষ্ঠান নানান কৌশলে সাধারন মানুষের কোটি কেটি টাকা আত্মসাৎ করছে যার কোন সুরাহা হচ্ছে না ফলে এমন আরো অনেক প্রতিষ্ঠানই মানুষের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের পায়তারা করছে। শহর ও শহরতলীর অনেকেই জানালেন বর্তমানে আরো কিছু কোম্পানী টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পায়তারা করছে এবং জেলা শহরের অনেক জায়গায় এসব কোম্পানীর শাখা অফিসগুলো পালিয়েও গেছে। সাধারন মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় সরকারের বিরুদ্ধে তথা নাশকতার কাজে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের পিছনে এহসান এস বাংলাদেশসহ কিছু প্রতিষ্ঠান অর্থ জোগান দিচ্ছে। এহসান এস বাংলাদেশ নামে মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থেকে সাধারণ গ্রাহকের  কোটি টাকা নিয়ে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করে গ্রাহককে তা লাভসহ ফেরৎ না দিয়ে নানান টালবাহানা করছে। তাদের ফরিদপুর শহরে অবস্থিত সাইনবোর্ডবিহীন জেলা কার্যালয়ে বর্তমান অবস্থা জানতে গত ৮ নভেম্বর শনিবার বিকালে সরেজমিনে গেলে তাদের রহস্যময়ী আচরন প্রতিবেদককে প্রশ্নবিদ্ধ করে।শরীয়তুল্লা বাজারের বায়তুল মোকারম মসজিদের বিপরিদ পাশে একটি তিনতলা ভবনের ভিতরে ২য় তালায় তাদের অফিস। বাইরে কোন সাইনবোর্ড নেই তবে দরজার পাশে ছোট করে এহসান সোসাইটি লেখা রয়েছে।

সেখানে ম্যানেজারের দায়িত্বে কর্মরত ফারুক নামে একজন নিজেকে অফিসের কেরানী পরিচয় দিয়ে কেন এসেছি জানতে চাইলেন। তাকে এই প্রতিষ্ঠানে কয়েকটি শাখার টাকা আত্মসাৎ করে অফিস বন্ধ রেখে কর্মচারীরা পালিয়ে গেছে কেন আর আপনাদের এখানে বিষয়টি নিয়ে কি অবস্থা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রয়েছে বাংলাদেশের বড় বড় ক্ষমতাধর ব্যাক্তিরা সেখানে আপনারা সাংবাদিকরা লিখে কি করতে পারবেন উল্টো চাদাবাজি মামলার আসামী হবেন বলে সাফসাফ জানিয়ে দেয়। তার সঙ্গে তথ্য জানার জন্য অনেক অনুরোধ করলে তিনি বলেন দয়া করে চলে যান না হলেও এক্ষনি ঝামেলায় পরবেন। এই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আশেপাশে অনেকের সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক অনুসন্ধান করে জানাযায় ফারুক নামের ঐ কর্মচারী এই প্রতিষ্ঠানের ফরিদপুর জেলা অফিসের ম্যানেজার যিনি তার অফিসে সন্ধ্যার পর মাঝে মাঝেই জঙ্গীকালেকশনের বিষয়ে গোপন মিটিং করে থাকে। ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন থানা থেকে এবং দেশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে অনেক মানুষ তার সাথে দেখা করে বিভিন্ন কথা বলেন এবং তাদের সেসব কথপোকথন অতি গোপনে হয় যেটা স্থানীয়দের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে। অফিসের আশেপাশের অনেকের সাথে কথা হলে তারা জানালেন, এখানে নিয়মিত যারা সঞ্চয় করে তাদেরকে ২ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন দেওয়া হয় এবং গ্রাহককে ডিপোজিট করিয়ে ৫ থেকে ৬ বছরের জন্য আমানত গ্রহন করা হয়। তাদের কার্যক্রম সব সময় নগদ লেনদেনে হয় ব্যাংকের লেনদেন কেবল নিজস্ব ব্যাংকের মাধ্যমে হয়ে থাকে যার কোন তথ্য সাংবাদিকদের দিতে অপাগরতা প্রকাশ করেন।

জানাযায় গ্রাহকের টাকা নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুরে একটি ঝামেলা হয়েছিলো যা পরবর্তীতে কিছু টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছিলো। এস বাংলাদেশ এর আরেকটি অফিস ফরিদপুর জেলা শহরের ২ নং সড়কের ঠিকানায় রয়েছে বলে জানার পর সেখানে অনেক খোজাখুজি করা হয়, বাস্তবে ২ নং সড়কে তাদের কোন অফিসই চালু নেই। এহসান এস বাংলাদেশ নামে ঢাকায় ২০০৩ সালে সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে এহসান এস বাংলাদেশ নামে এনজিও ক্যাটাগড়িতে একটি অনুমোদন নেয় যা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় শাখা অফিস খুলে সাধারন মানুষের কাছ থেকে অর্থ সঞ্চয় করে। তারা এ অনুমোদনে শুরু করে অর্থ লোন ও সুধের কারবারি করতে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডে সাধারন মানুষের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি জানাজানি হলে সমাজ সেবা অধিদপ্তর তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। ২০০৯ সালেই আবার তারা জয়েনষ্টক থেকে এহসান সোসাইটি নামে নতুন করে রেজিষ্ট্রেশন নেয়। জয়েনষ্টক থেকে রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে পূর্বের কাজেই তারা বহাল থাকে। আরো জানাযায় ২০০৫ সালে ফরিদপুর নগরকান্দা এহসান সোসাইটি বাংলাদেশ শাখা চালু হয়। জঙ্গিকালেকশনের সাথে তাদের যোগাযোগ রয়েছে এর প্রমান স্বরুপ অনেকে জানান, ১৭ই আগষ্ট সারা বাংলাদেশে সিরিজ বোমা হামলার আসামী ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানার বাসিন্দা মুফতি ইসমাতুল্লাহ নগরকান্দা শাখার মুল সম্বন্বায়ক।

গত২৭ অক্টোবর ২০১৪ ইং সোমবার দৈনিক সমকাল , দৈনিক নাগরিক বার্তাসহ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় ” ফরিদপুরে গ্রাহকের ২ কেটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রাইম মাল্টিপারপাসের ম্যানেজার সম্পা ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সাধারন মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারনার স্বীকার হলেও প্রশাশনের উপযুক্ত নজরদাড়ি না থাকায় এসব সুধের কারবারিরা তাদেও সুধের রমরমা ব্যবসা চালিয়েই যাচ্ছে। অথচ প্রতিনিয়ত প্রতারনার স্বীকার হয়ে দিন এন দিন খাওয়া সাধারন মানুষ সহায়সম্বল হারিয়ে পথের ফকির হচ্ছে।