জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

আজ ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
রাষ্ট্রপতি জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল প্রদত্ত এক বাণীতে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হবে জ্ঞানগরিমায় সমৃদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করে বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধ একটি দেশে পরিণত করা। তাহলেই চিরঞ্জীব এই মহান নেতার প্রতি আমরা যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারব। ’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এ দিনে ঘাতকচক্রের হাতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূসহ নিকট আত্মীয়গণ শাহাদত বরণ করেন। আমি শোকাহত চিত্তে তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। জাতীয় শোক দিবসে পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
তিনি বলেন,বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীনতার রূপকার। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬-দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি (বঙ্গবন্ধু) নেতৃত্ব দেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে ‘ভিশন ২০২১’ এবং ‘ভিশন ২০৪১’ ঘোষণা করেছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে, এ জন্য প্রয়োজন সকলের সমন্বিত প্রয়াস।’
বাংলাদেশ গড়তে কাজ করুন : প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল প্রদত্ত বলেন, ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। তাই ‘আসুন, আমরা জাতির পিতা হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করি। তাঁর ত্যাগ এবং তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ ধারণ করে সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। প্রতিষ্ঠা করি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। জাতীয় শোক দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের এ দিনে সপরিবারে মানব ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, দশ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, কৃষকনেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বেবী সেরনিয়াবাত, সুকান্ত বাবু, আরিফ, আব্দুল নঈম খান রিন্টুসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে ঘৃণ্য ঘাতকরা এ দিনে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামরিক সচিব কর্নেল জামিলও নিহত হন। ঘাতকদের কামানের গোলার আঘাতে মোহাম্মদপুরে একটি পরিবারের বেশ কয়েকজন হতাহত হন।
এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ’৭৫’র ১৫ আগস্টের পর থেকেই হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথও বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি এবং স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব দেয়, রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার করে। পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকারও একই পথ অনুসরণ করে।
তিনি জাতীয় শোক দিবসে মহান আল্লাহ্তায়ালার দরবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার দূরদর্শী, সাহসী এবং ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। বাঙালি পেয়েছে স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত।
প্রধানমন্ত্রী গত সাড়ে ৮ বছরে দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন তুলে ধরে বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্র-বিরোধীদের যে-কোনো অপতত্পরতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানান।