প্রধান মেনু

বিএনপি যে কখন তাবিজ-দোয়ার ওপর ভর করে সেটিই প্রশ্ন—-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কক্সবাজার, ২৯ বৈশাখ (১২ মে): পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি গত নির্বাচন বর্জনের পর তাদের হতাশা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা যে কখন তাবিজ-দোয়ার ওপর ভর করে সেটিই প্রশ্ন।

আজ কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্হায়ী কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে যোগদানের পূর্বে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে’ মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার পর পর চারবার জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছে। এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে দেশ পরিচালনা করছেন। বিএনপি এখন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।

গত নির্বাচন বর্জনের পর তাদের হতাশা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা অদৃশ্য শক্তির ওপর বিশ্বাস করা শুরু করেছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা জানেন, তারা ক্ষণে ক্ষণে বিদেশিদের দুয়ারে যায়, এখন তারা যে কখন তাবিজ-দোয়ার ওপর ভর করে সেটিই আমার প্রশ্ন।’

‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেরির অজুহাত হতে পারে না’ রাখাইনে সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দেরি হচ্ছে কি না, এখানে আরাকান আর্মি ভূমিকা রাখবে কি না -এ প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেখুন ‘উই এনগেইজ উইথ দ্য গভর্নমেন্ট’, আমরা মিয়ানমারের সরকারের সাথেই আলাপ-আলোচনা করছি। সেখানে অভ্যন্তরীণ  সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দেরি হচ্ছে সেটিও সঠিক।  কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে মিয়ানমারে সবসময়েই গোলযোগ ছিল।

‘গত ৭০-৮০ বছরের ইতিহাস দেখুন, মিয়ানমার কখনোই গণ্ডগোলমুক্ত ছিল না, কিন্তু সেই কারণে মিয়ানমার থেকে যে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছে, যারা মিয়ানমারের নাগরিক, শত শত বছর ধরে সেখানে আছে, তাদেরকে ফেরত নিয়ে না যাওয়ার কোনো অজুহাত হতে পারে না’ যুক্তি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান।

এ দিন সংসদীয় স্হায়ী কমিটির সদস্যদের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের এখানে আশ্রয় দেওয়ার প্রেক্ষিতে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হয়েছে। যেমন রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশগত সমস্যা, আইন-শৃঙ্খলাগত সমস্যা, একইসাথে অনেক রোহিঙ্গা ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক পাচার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে।

‘সন্ত্রাসী ও ফ্যানাটিক গ্রুপগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তাদের সদস্য রিক্রুট করছে’ বর্ণনা করে মন্ত্রী বলেন, এ সবের কারণে শুধু আমাদের দেশে সমস্যা তৈরি হচ্ছে তা নয়, আশপাশের দেশেও সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক বিস্তারজনিত সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

হাছান মাহমুদ জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমার কথা হয়েছে এবং অন্যান্য দেশের সাথেও নিয়মিতভাবে আমরা আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি, যাতে নিজেদের নাগরিকদের পূর্ণ অধিকারসহ ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর কার্যত চাপ প্রয়োগ করা হয়।

পরিতাপের সুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, মিয়ানমার সবসময় বলে তারা ফেরত নেবে, কিন্তু আজ পর্যন্ত গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও তারা ফেরত নেয়নি। উপরন্তু আমাদের ওপর নতুন সমস্যা  তৈরি হয়েছে যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে  ইতিমধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি’র প্রায় পাঁচশত সদস্য ও তাদের সেনাবাহিনীর সদস্য পালিয়ে আমাদের দেশে এসেছে। তিনি বলেন, আমরা মিয়ানমারের সাথে আলাপ-আলোচনা করে তাদের ফেরত পাঠিয়েছি কিন্তু নতুনভাবে আরো ১৩৮ জন এখন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, তার মধ্যে সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও দু’জন মেজরও আছে।

এদের নিয়ে পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে মন্ত্রী জানান, অতীতে পালিয়ে আসাদের ফেরতদানের একই প্রক্রিয়ায় এদেরও আমরা ফেরত পাঠাতে পারবো বলে আশা করছি এবং মিয়ানমারেরও তাদেরকে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে।

দু’দেশের সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতেই আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে আসছেন -এ নিয়ে প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে চমৎকার। গত নির্বাচনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা পত্রে সে কথাই বলেছেন। এই সম্পর্ককে আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে বাংলাদেশে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। আমাদের চেষ্টা থাকবে এ সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার।