সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলো ‘প্রত্যয় স্কিম’

ঢাকা, ৬ চৈত্র (২০ মার্চ): সরকার ১৩ মার্চ, ২০২৪ খ্রি. তারিখে জারীকৃত এস.আর.ও. নং-৪৭-আইন/২০২৪ এর মাধ্যমে সকল স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের চাকরিতে যে সকল কর্মকর্তা বা কর্মচারী ১ জুলাই, ২০২৪ খ্রি. তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করবেন, তাদেরকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভুক্ত করেছে। এছাড়া, ১৩ মার্চ, ২০২৪ খ্রি. তারিখে জারীকৃত এস.আর.ও. নং-৪৮-আইন/২০২৪ এর মাধ্যমে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মচারীগণের জন্য প্রযোজ্য প্রত্যয় স্কিমের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে এসকল প্রতিষ্ঠানসমূহের বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীগনের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না এবং তাদের বিদ্যমান পেনশন/আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকবে। তবে, যাদের ন্যূনতম ১০ বছর চাকরি অবশিষ্ট আছে তারা আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবসর জীবনে মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন বিধায় ১ জুলাই, ২০২৪ খ্রি. তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন যোগদানকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীগনের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় খুব কম সংখ্যক স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহে পেনশন স্কিম চালু রয়েছে। এ ধরনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীগণ আনুতোষিক স্কিমের আওতাভুক্ত এবং তাদের জন্য সিপিএফ (Contributory Provident Fund) ব্যবস্থা প্রযোজ্য। উক্ত ব্যবস্থায় কর্মচারীগণ চাকরি শেষে অবসর সুবিধা হিসাবে এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হন, কিন্তু মাসিক কোন পেনশন প্রাপ্য হন না। ফলশ্রুতিতে অবসরোত্তর জীবনে প্রায় ক্ষেত্রেই আর্থিক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হন। কর্মচারীদের অবসরোত্তর জীবনের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে সরকার ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রবর্তন করেছে। প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূলবেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা, যাহা কম হয় তা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন হতে কর্তন করা হবে এবং সমপরিমান অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে। অতঃপর উভয় অর্থ উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত উক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্পাস হিসাবে জমা করবে। এ প্রক্রিয়ায় উক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন ফান্ড গঠিত হবে এবং উক্ত ফান্ড জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য মুনাফা এবং চাঁদা হিসাবে জমাকৃত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন প্রদান করা হবে।
বিদ্যমান সিপিএফ ব্যবস্থায় কর্মচারী মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রদান করে থাকে। প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে মূল বেতনের ১০ শতাংশ যা সিপিএফ ব্যবস্থা থেকে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। প্রত্যয় স্কিমে একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা নিজ বেতন থেকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে একই পরিমাণ টাকা ৩০ বছর চাঁদা প্রদান করলে তিনি অবসর গমনের পর অর্থাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা হারে পেনশণ প্রাপ্য হবেন। এক্ষেত্রে ৩০ বছর ধরে মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ বেতন থেকে প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ ৯ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী মিলিয়ে সর্বমোট চাঁদার পরিমাণ হবে ১৮ লাখ টাকা। তিনি যদি ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তবে ১৫ বছরে পেনশন প্রাপ্য হবেন ১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা, যা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ জমার ১২ দশমিক ৪৭ গুণ। আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন বিধায় এ পরিমান আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ হতে প্রাপ্য মুনাফার হার বৃদ্ধি পেলে মাসিক পেনশনের পরিমান আরো বৃদ্ধি পাবে। অধিকন্তু, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় খরচ সরকার কর্তৃক নির্বাহ করা হবে বিধায় চাঁদাদাতার কর্পাস হিসাবে জমাকৃত অর্থ এবং বিনিয়োগলব্ধ আয় সম্পূর্ণ চাঁদাদাতার অ্যানুইটি হিসাবায়নের মাধ্যমে মাসিক পেনশন নির্ধারিত হবে। জমাকৃত চাঁদার ওপর বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়া যাবে এবং প্রাপ্য পেনশন আয়করমুক্ত হবে। স্কিমটি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় এটি শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ। এ স্কিমে নিবন্ধিত কর্মচারী পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পরবর্তী মাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ব্যাংক একাউন্টে মাসিক পেনশনের অর্থ পেতে থাকবেন, যা তাকে মোবাইল এসএমএস-এর মাধ্যমে অবহিত করা হবে। এক্ষেত্রে তাকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোন দপ্তরে যাওয়ার বা কোন প্রকার প্রমানক দাখিলের প্রয়োজন হবে না। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, প্রত্যয় স্কিমটি নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আকর্ষনীয় এবং আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর।