বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

ঢাকা, ১৩ ফাল্গুন (২৬ ফেব্রুয়ারি) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষ্যে এর সকল সদস্যকে অভিনন্দন এবং স্মরণিকা ‘উদ্দীপন’ প্রকাশের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে শহিদ পুলিশ সদস্যসহ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য সময়ে দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে যে বাহিনীর পুনর্গঠন ও উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন তা হলো বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। আওয়ামী লীগ সরকার যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ পুলিশের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা পুলিশের বাজেট বৃদ্ধি, ঝুঁকিভাতা চালু, রেশন প্রাপ্তির হার দ্বিগুণ এবং প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করি। ১৯৯৮ সালে আমরাই প্রথম পুলিশ সুপার পদে নারী কর্মকর্তাকে নিয়োগ, পাঁচ কোটি টাকা সিড মানি দিয়ে পুলিশ কল্যাণট্রাস্ট গঠন, পুলিশ স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠা, পুলিশের জনবল বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ বহুমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করি ।
বিগত ১৫ বছরে আমরা নতুন পদ সৃষ্টি, বিভিন্ন স্তরে বিপুল সংখ্যক পদোন্নতি, পদমর্যাদা এবং গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। আমরা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), শিল্প পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, এন্টি টেরোরিজম, কাউন্টার টেরোরিজম, নৌপুলিশ, এমআরটি পুলিশ ও এসপিবিএনসহ অনেকগুলো নতুন বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছি। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পার্বত্য জেলাগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় কয়েকটি ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হয়েছে। আমরা পুলিশ স্টাফ কলেজকে আন্তর্জাতিকমানের প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করেছি। আমরা থানা, ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্ৰ, ব্যারাক, আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দিয়েছি। দশ তলা ভবন করে রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালকে আধুনিকায়ন করেছি। আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। পুলিশ বাহিনীর জন্য ডিএনএ ল্যাব, ফরেনসিক ল্যাব, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এফআইএস) ও আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করেছি। আকাশপথে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পুলিশের এয়ার উইং গঠন করা হয়েছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের এসকল সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে পুলিশ বাহিনী আজ একটি আধুনিক, যুগোপযোগী, দক্ষ, গতিশীল ও জনবান্ধব বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
রূপকল্প ২০২১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০, রূপকল্প-২০৪১, ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ ও সুনীল অর্থনীতির বিকাশ সর্বোপরি উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ তার সহযাত্রী। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়ন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও তারা পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, অ্যাপস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সসহ উন্নত তথ্যপ্রযুক্তি ও লজিস্টিকস সামগ্রীর ব্যবহারের মাধ্যমে পুলিশ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেকে যোগ্য করে তুলছে।
আমি আশা করি, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের মধ্যে প্রীতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন, কল্যাণমূলক ও জনহিতকর কার্যক্রম গ্রহণ এবং দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতে আরো বেশি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, পেশাদারিত্ব, ত্যাগ, বীরত্ব ও দেশপ্রেমের সাথে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।
আমি ‘বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’ এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”