প্রধান মেনু

২৪ এপ্রিল প্রকাশের জন্য আজ সিরাজগঞ্জের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবস

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ঃ ২৪ এপ্রিল। সিরাজগঞ্জের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবস। ’৭১ এর এই দিনে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ঘাটিনা রেল সেতুতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়। বেলা ৩টা থেকে শুরু হওয়া এ যুদ্ধ চলে প্রায় ৩ ঘন্টা। এতে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। তদানীন্তন সিরাজগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক এ.কে.এম শামসুদ্দিন আহমেদ ও সে সময়ের উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের পরিচালক আব্দুল লতিফ মির্জা যৌথভাবে এ প্রতিরোধ যুদ্ধের নেতৃত্বে দেন।

২৩ এপ্রিল পাকবাহিনী সড়ক পথে পাবনা থেকে সিরাজগঞ্জ আসতে বেড়া উপজেলার ডাব বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পিছু হটে। পরে তারা ঈশ্বরদী থেকে ট্রেন যোগে উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন হয়ে সিরাজগঞ্জে ঢোকার পরিকল্পনা করে। এদিন সকাল ১০টার দিকে লতিফ মির্জার নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা উল্লাপাড়ার শাহজাহানপুর গ্রামের পাশে করতোয়া নদীর উপর রেলসেতুর কয়েকটি রেল খুলে নদীতে ফেলে দেন। পাকবাহিনী বহনকারী ট্রেনটি ব্রিজের পশ্চিমপাশে এসে দাঁড়ানোর পর বেশ কয়েকজন পাকসেনা সেতুর অবস্থা দেখতে নেমে আসে।

এ সময় নদীর পূর্ব পাশে বাঙ্কারে অঁৎপেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এরপর পাকসেনারাও পাল্টা গুলি চালায়। পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্র থেকে বৃষ্টির মত গুলি ছোঁড়ার ফলে ভয়ে আতংকে পার্শ্ববর্তী শাহজাহানপুর, লক্ষ্মীপুর, কর্মকারপাড়া, মাটিকোড়া, ঘাটিনা সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রামবাসীরা বাড়িঘর সহায় সম্পদ ফেলে বেলকুচি উপজেলার দিকে পালিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে যুদ্ধে হেরে পাকবাহিনী উল্লাপাড়া স্টেশনে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পরদিন আবার ব্যাপক সমর সজ্জা নিয়ে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমণ চালালে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে।

বেলা ১১টার দিকে উক্ত ব্রিজে নতুন করে রেল বসিয়ে পাকবাহিনী তাদের ট্রেন পার করে সিরাজগঞ্জ চলে যায়। যাবার সময় রেলপথের দুইধারের গ্রামগুলো তারা পুড়িয়ে দেয়। উল্লাপাড়ার এই প্রতিরোধ যুদ্ধটি সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রথম সংঘটিত হওয়ায় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই দিনটি সিরাজগঞ্জের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আশির দশকের গোড়ার দিকে উল্লাপাড়া থানা পরিষদ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ যুদ্ধের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে করতোয়া নদীর পূর্ব পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান নেওয়া স্থানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। ফলকটি এখন প্রতিদিনই পথচারী ও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে।