প্রধান মেনু

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ৫০ শয্যার সুবিধাও নেই

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী সংবাদদাতা ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ৫০ শয্যার সুবিধাও নেই। ফলে রোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই। হাসপাতালের অবকাঠামো তৈরি হলেও সেখানে ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী দেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের রোগীদের খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদারের বিলও প্রায় ৫ মাস বকেয়া পড়েছিল। নানা দেন দরবার করার পর গত ডিসেম্বরে তার বিল পরিশোধ করা হলেও অন্যান্য বরাদ্দ ও জনবল নিয়োগের কোন উদ্যোগ নেই।

নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি বিগত ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। শহরের কুন্দল এলাকায় অবস্থিত এ হাসপাতালটিতে শুধুমাত্র সৈয়দপুর উপজেলার মানুষই চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন না। সৈয়দপুর আশপাশের দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ এবং নীলফামারী সদর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার লোকজনও চিকিৎসা সেবার নেওয়ার জন্য এ হাসপাতালটিতে আসেন প্রতিনিয়ত। গেল ২০১১ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সৈয়দপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন হাসপাতাল ভবন, আটটি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়ে আসছে। যদিও এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যার জনবল দেওয়া হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল না থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ার বাসিন্দা মো. মহসিনুল হক মহসিন নামের জনৈক ঠিকাদার বেশ কয়েক বছর যাবৎ হাসপাতালের রোগীদের পথ্য সরবরাহ করে আসছেন।

গেল ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ঠিকাদার মহসিনুল হক হাসপাতালের রোগীদের পথ্য সরবরাহ বিল নিয়মিতভাবেই উত্তোলন করেন। কিন্ত বিপত্তি ঘটে গত জুলাই মাস থেকে। হাসপাতালের রোগীদের পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার মহসিনুল হক চলতি ২০১৮ সালের গত জুলাই মাসের বিল তৈরিপূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সৈয়দপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে জমা করেন। কিন্ত হাসপাতালের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ নেই মর্মে সৈয়দপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয় থেকে ঠিকাদারের ওই বিল পাশ না করে ফেরত দেওয়া হয়।

হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, বরাদ্দ না আসায় হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি তেল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিলও বকেয়া পড়েছে। এ সব বিলের জন্য সংশ্লিষ্টরাও প্রতিদিন হাসপাতালে ধর্ণা দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ থেকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য চলতি ২০১৮- ২০১৯ইং অর্থবছরে সরকারিভাবে কোন অর্থ বরাদ্দ হয়নি। ফলে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালের রোগীদের পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারের প্রায় ১৭ লাখ টাকার বিল বকেয়া পড়েছে বলে জানা গেছে।

এ অবস্থায় পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার তার বিলের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পর্যন্ত দৌঁড়ঝাঁপ করেন। কিন্ত গত ডিসেম্বর পর্যন্ত তার পথ্য সরবরাহ বিলের কোন সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় রোগীদের পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার নিরুপায় হয়ে গত ১৮ নভেম্বর নীলফামারী সিভিল সার্জন বরাবরে আবেদন করেছেন। হাসপাতালের রোগীদের পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার মো. মহসিনুল হক মহসিন বলেন, সৈয়দপুরের আশপাশের হাসপাতালগুলোর পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদাররা বিল উত্তোলন করেছেন নিয়মিত। কিন্ত অজ্ঞাত কারণে আমার বিল আটকে ছিল। বিলের জন্য আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি, ডাইরেক্টর (অর্থ) পর্যন্ত অনেক ধর্ণা দিয়েছি।

কিন্ত কেউই বিলের ব্যাপারে কোন কিছুই সঠিকভাবে জানাতে পারেন নাই। তবে অনেক প্রচেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত গত ২২ ডিসেম্বর আমার বকেয়া বিল পেয়েছি। সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আরিফুল হক সোহেল জানান, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আশা করছি অনতিবিলম্বে এব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং দ্রুতই স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান হবে।