প্রধান মেনু

সৈয়দপুর রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা প্রকল্প পরিপত্র জারির মধ্যেই ১৬ মাস ধরে থমকে আছে

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের ৩টি রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাকল্পে গ্রহণ করা প্রকল্পের অগ্রগতির বেহাল অবস্থা চলছে। পরিপত্রের মধ্যেই থমকে আছে এর কার্যক্রম। বিগত ১৬ মাসেও একটি সভা হয়নি প্রকল্প কমিটির। এ কারণে অগ্রগতি সম্পর্কে কিছুই জানেন না সদস্যরা। এমনকি প্রকল্প কমিটির একজন গুরুত্বপূণ সদস্য জানেনই না যে তাকে সদস্য করা হয়েছে। ফলে চরম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি। এতে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের এপ্রিলে রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় সারাদেশে রেলওয়ের অব্যবহৃত জমি বানিজ্যিকভাবে ব্যবহারে বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। লোকসানে থাকা রেলওয়ের অব্যবহৃত জমিতে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইন্সটিটিউট, তারকা হোটেল ও শপিংমল প্রতিষ্ঠায় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। রেলওয়ে উন্নয়ন কর্মসূচীতে তালিকাভুক্ত এসব প্রকল্প পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) এর আওতায় বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্প গ্রহণের স্থান হিসাবে চিহ্নিত করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, খুলনা, পাকশী ও সৈয়দপুর কে।

এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া হয় ওই সভায়। এর দীর্ঘ এক বছর পর ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাকল্পে রেলওয়ের মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে গঠন করা হয় চার সদস্য বিশিষ্ট প্রকল্প কমিটি। রেলওয়ের মহাপরিচালক দপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রকৌশলী) মোঃ সেলিম রউফ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে প্রকল্প পরিচালক হিসাবে কমিটির প্রধান করা হয় রেল ভবনের পরিচালক (প্রকৌশলী) কে। কমিটির সদস্য করা হয় বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দপুর, বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা পাকশী ও বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা পাকশী কে।

ওই পরিপত্রে বলা হয়, রেলওয়ে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপে সৈয়দপুর, পাকশী ও খুলনায় অবস্থিত রেলওয়ে হাসপাতালকে রেলওয়ে মেডিকেল কলেজে উন্নীত করা সহ ২৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল করা। পিপিপি’র আওতায় ৫০ আসনের মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাকল্পে বেসরকারী বিনিয়োগের সম্ভাব্য অর্থ বরাদ্দ ধরা হয় ৬০ কোটি টাকা। এর বাদ বাকি ব্যায়ের অর্থায়ন করবে রেলওয়ে। পরিপত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয় গঠিত প্রকল্প কমিটিকে। যা কমিটির সদস্যদের চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়। কিন্তু কমিটি গঠনের ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটির একটি সভাও করা হয়নি। এমনকি কমিটির করণীয় সুপারিশ সম্পর্কেও পরবর্তীতে আলাদা কোন চিঠি দেয়া হয়নি। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কে অন্ধকারে আছেন কমিটির সদস্যরা।

এদিকে রেলওয়ে হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে উন্নীত করার প্রকল্পের কোন অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন সৈয়দপুরসহ তিন শহরের মানুষ। তাদের মন্তব্য রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রকল্প কাগজে কলমে রয়ে গেছে, বাস্তবে এর দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতা মোখছেদুল মোমিন জানান, রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের দাবি আমলে নিয়ে রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা প্রকল্প সরকার অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি। তবে সরকারের মহতি ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্প কমিটির কোন অবহেলা থাকতে পারে। তিনি কমিটিকে সময় অপচয় না করে দ্রুত এর কাজ শুরুর আহ্বানা জানান।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আখতার হোসেন বাদল বলেন, প্রকল্প কমিটির সভা না হওয়া খুবই দুঃখজনক। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। অবহেলিত এ অঞ্চলে চিকিৎসা ও মেডিকেল শিক্ষা বিস্তারে রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে রেলপথ মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। প্রকল্প কমিটির সদস্য ও সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালের বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ শামীম আরার সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে জানান, আমাকে চিঠি দিয়ে প্রকল্প কমিটির সদস্য করার বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু ১৬ মাসেও কমিটির একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি।

তিনি বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে আছেন তবে ওই উদ্যোগ রেলওয়ের সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন।  এ ব্যাপারে প্রকল্প কমিটির অপর সদস্য ও পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মোঃ নুরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাকে প্রকল্প কমিটির সদস্য করা হয়েছে, এমন কোন চিঠি তিনি এ যাবত পাননি। প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে রাজশাহীস্থ পশ্চিামাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ইমতিয়াজ মুঠোফোনে জানান, রেলপথ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বদল হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি স্থবির হয়ে আছে। তবে মন্ত্রনালয় উদ্যোগ নিলে প্রকল্প কমিটির কাজ দ্রুত শুরু করা সম্ভব
হবে।