নীলফামারী  প্রতিনিধি ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুরে চাঁদাবাজির মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহসান হাবিব সরকার ওরফে সোহাগ সরকারকে (৩৫) গ্রেফতর করা হয়েছে। স্থানীয় বিনোদন পার্ক পাতাকুঁড়ির মালিকের দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার করে সৈয়দপুর থানা পুলিশ।

মামলা সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর শহরের চাঁদনগর এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন ২০১৮ সালে শহরের উপকন্ঠে কয়াগোলাহাট এলাকায় পাঁচ একর ১৫ শতক জমিতে পাতাকুঁড়ি নামে একটি বিনোদন পার্ক গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। বর্তমানেও পার্কটির নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। পার্কটির কাজ শুরুর পর থেকে একই এলাকার বাসিন্দা সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মৃত আব্বাস আলী সরকারের ছেলে আহসান হাবিব সরকার ওরফে সোহাগ সরকার বিনোদন পার্কের মালিকের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। সেই সঙ্গে পার্কে প্রতিদিন আসা দর্শনার্থীর কাছে বিক্রি করা টিকিটের শতকরা ৩০ টাকা দাবি করে। আর দাবিকৃত চাঁদা ও টিকিট বিক্রির ৩০% টাকা না পেয়ে এর মালিক জয়নাল আবেদীন কে জীবননাশের হুমকি প্রদান করা ছাড়াও দর্শনার্থীদের পার্কের অভ্যন্তরে প্রবেশে নানা রকম বাঁধা বিঘ্নের সৃষ্টি করে আসছিল।

এমতাবস্থায় গত ১১ আগস্ট ঈদুল আজহার আগের দিন সকাল ১০ টায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহাগ সরকার তাঁর সঙ্গীয় ৪/৫ জনকে নিয়ে বিনোদন পার্ক পাতাকুঁড়িতে যায়। এ সময় তারা পার্কের অভ্যন্তরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে অফিস কক্ষে ঢুকে ম্যানেজার উমর ফারুক সবুজের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে বসে। এ অবস্থায় পার্কের ম্যানেজার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের জানায় ওই মূহুর্তে তার নিকট উল্লেখিত পরিমান টাকা নেই।

এসময় তারা পার্কের কাউন্টারের ড্রয়ার হতে জোরপূর্বক ১০ হাজার টাকা বের করে নেয়। ম্যানেজার তাৎক্ষনিক ঘটনাটি মোবাইল ফোনে পাতাকুঁড়ি পার্কের মালিককে অবহিত করলে মালিক জয়নাল আবেদীন তাঁর ছেলে রফিকুল ইসলাম বিদ্যুৎকে সঙ্গে নিয়ে তাৎক্ষনিক পার্কে ছুটে যান। এসময় তাদের পার্কের অফিস কক্ষে ঢুকতেই দেখে চাঁদা দাবিকারী সোহাগ সরকার তাঁর কোমর হতে একটি ছোট আগ্নেয়াস্ত্র সদৃশ্য বস্তু বের করে এবং পার্কের মালিকের দিকে উচিঁয়ে ধরে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি ছাড়াও দৈনিক টিকিট বিক্রির ৩০% টাকা দাবি করে।

এ সময় তাঁর দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পার্কের মালিক জয়নাল আবেদীন এর প্রতিবাদ করেন। এতে চাঁদা দাবিকারী সোহাগ সরকার ও তাঁর সঙ্গীয়রা পার্কটি ভাঙ্গচুর করে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়াসহ পার্কের মালিককে ও তাঁর ছেলেকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে চাঁদা দাবিকারী সোহাগ ও তাঁর সঙ্গীয়রা পার্কের ভেতর থেকে ম্যানেজার ও কর্মচারীদের তাড়িয়ে দিয়ে পার্কের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও তারা পার্কের প্রবেশের রাস্তা কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং পাতাকুঁড়ি পার্ক বন্ধ লেখা একটি ব্যানার টাঙ্গিয়ে দিয়ে মালিককে নানা রকম হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে যায়।

এ অবস্থায় পাতাকুঁড়ি পার্কের মালিক জয়নাল আবেদীন নিরুপায় হয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহসান হাবিব সরকার ওরফে সোহাগ সরকারকে প্রধান আসামী করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে গত ১৯ আগস্ট রবিবার সৈয়দপুর থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৮। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই দীলিপ কুমার রায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈয়দপুর-নীলফামারী বাইপাস সড়কের কয়া গোলাহাট এলাকা থেকে চাঁদাবাজির মামলার প্রধান আসামী আহসান হাবিব সরকার ওরফে সোহাগ সরকারকে গ্রেফতার করে। সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহজাহান পাশা চাঁদাবাজির মামলায় আহসান হাবিব সরকার ওরফে সোহাগ সরকারকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আটক সোহাগকে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর দির্শেন দেন।