সাভারে আত্মহত্যার প্ররোচনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অটোরিকশা চালকের মায়ের মামলার প্রস্তুতি

মোঃ সিরাজুল ইসলামঃপরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শামীম শিকদার। শামীমের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ভাইজোড়া গ্রামে। তাঁর বাবা নেই। মা, স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন আশুলিয়ার নরসিংহপুরে। স্ত্রী ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া বড় মেয়ের কানে সমস্যা। অস্ত্রোপচার লাগবে। তাই অনেক টাকার প্রয়োজন।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। দুই দিন ধরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
গত শুক্রবার সকালে পুলিশের অত্যাচারে এবং প্ররোচনায় নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এমনটিই অভিযোগ করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে শামীম শিকদারের মা রিজিয়া বেগম জানান, অনেক যন্ত্রণার পর ছেলেটা একটু ঘুমিয়েছে। উপার্জনক্ষম ছেলের এই পরিণতি দেখে মা একবার ক্ষোভ প্রকাশ করে কান্না বিজড়িত কন্ঠে এভাবেই বলছিলেন। তিনি আরও জানান, পুলিশ অটোরিকশার ব্যাটারি খুলে নিয়ে যায়। ছেলে তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক কাকুতি-মিনতি করে। কিন্তু পুলিশ তা ফেরত দেয়নি। উল্টো মারধর করে। এর আগেও পুলিশ একই কাজ করেছে। এইবার ছেলে পুলিশকে হুমকি দেয় সে আত্মহত্যা করবে। তখন পুলিশ বলে, ‘কেমন বাপের বেটা, কর আত্মহত্যা।’ এ কথা শুনে ছেলে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি খুব শীঘ্রই আইনি প্রক্রিয়ায় এর বিচার দাবী করব।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানিয়েছেন, শামীম শিকদারের শরীরের ৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। মুখে এবং গলার দিকটা দগ্ধ হলেও তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হওয়ার প্রত্যাশা করছেন এ চিকিৎসক।
শামীমের স্ত্রী তানিয়া বেগম বলেন, মাস ছয়েক আগে ধারদেনা করে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা কেনেন তাঁর স্বামী।
শামীমের ভগ্নিপতি আলিম শেখ বলেন, রিকশা আটকের পর শামীম কর্তব্যরত পুলিশকে তাঁর সমস্যার কথা বোঝানোর চেষ্টা করেন। এতে কাজ না হওয়ায় তিনি শরীরে কেরোসিন ঢেলে কর্তব্যরত পুলিশের কাছে যান। ব্যাটারি ফেরত না দিলে শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে জানান তিনি। কিন্তু পুলিশ তাঁকে নিবৃত্ত না করে উল্টো মারধর করে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়।
তবে শামীমের পরিবারের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাভার ট্রাফিকের পরিদর্শক আবুল হোসেন বলেন, উচ্চ আদালত ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী শামীমের রিকশাটি আটক করে ব্যাটারি খুলে নেয় পুলিশ। আর ওই ব্যাটারি ফেরত নিতে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই শামীম শরীরে আগুন লাগিয়ে দেন। আত্মহত্যার চেষ্টায় তাঁকে কেউ প্ররোচনা দেয়নি।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আওয়াল জাতীয় গোয়েন্দা সংবাদকে জানিয়েছেন, অটোরিকশাচালকের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, ব্যাটারি খুলে নেওয়ার কারণে শামীম কেন আত্মহত্যার চেষ্টা চালান, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।