সশস্ত্র সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় নিরাপত্তা পরিষদকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানালো জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি

নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র), ২৬ মে : “বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অগ্রাধিকার। আমরা এই অগ্রাধিকারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সবধরনের প্রচেষ্টা গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”-গতকাল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘সশস্ত্র সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা’ শীর্ষক বিতর্কে প্রদত্ত বক্তব্যে একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। উন্মুক্ত বিতর্কটির আয়োজন করে নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মে মাসের সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র।
মানবিক কাজে নিয়োজিত কর্মীদের প্রবেশাধিকার প্রত্যাখ্যান এবং তাদের উপর হামলার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা পরিষদ যে সকল সম্ভাব্য বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয় উন্মুক্ত বিতর্কটিতে।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চলমান সংঘাত, দীর্ঘায়িত মানবিক সংকট এবং ক্রমবর্ধমান জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির প্রেক্ষাপটে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন ক্রমাগত মানবিক চাহিদা বাড়ছে তখন প্রবেশাধিকার একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
মিয়ানমারের অনিশ্চিত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিলম্ব হচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন যে মিয়ানমারের পরিস্থিতি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য, বিশেষ করে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য অত্যন্ত অনিরাপদ যার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী” মিয়ানমারে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থার প্রবেশাধিকারের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীগণ যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে চলেছেন তা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের প্রায় সাত হাজার শান্তিরক্ষী বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং মিশনে কাজ করছে। তারা বেসামরিক এলাকার নিরাপত্তা প্রদান করছে, নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সেবা নিশ্চিত করছে। স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা প্রদানে সহায়তা করছে, কমিউনিটির সাথে সম্পর্ক বজায় রাখছে এবং নারী ও যুব সমাজকে ক্ষমতায়িত করছে।
দুর্ভাগ্যবশত শান্তিরক্ষী এবং মানবিক কর্মীরা ক্রমবর্ধমানভাবে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে এবং প্রায়শই ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এ সকল আক্রমণকে উসকে দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এ ধরনের ঘটনা মোকাবিলায় আরও কার্যকর যোগাযোগ কৌশল তৈরি করতে হবে। শান্তিরক্ষা মিশনসমূহে ‘বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা’র ক্ষেত্রে যে ম্যান্ডেট রয়েছে সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত সম্পদের সংস্থান নিশ্চিত করার উপর জোর দেন তিনি।
সংঘাতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ যাতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনসমূহ মেনে চলে সে বিষয়ে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে অপরাধীরা যাতে জবাবদিহিতার আওতায় আসে তা নিশ্চিত করার গুরুত্বের উপরও জোর দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “বেসামরিক নাগরিক, স্কুল, হাসপাতাল এবং মানবিক কাজে নিয়োজিত কর্মীগণকে টার্গেট করে যারা হামলা চালায়, কোনো অজুহাতেই তাদের ক্ষমা করা যাবে না। এ সকল হামলার তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে”।
সদস্য রাষ্ট্রসমূহের জাতীয় বিচারিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতসহ আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতা ব্যবস্থাকে সমর্থন জোগানোর জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।