সশস্ত্রবাহিনী দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ নভেম্বর সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “সশস্ত্রবাহিনী দিবস ২০১৮ উপলক্ষে আমি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। ঐতিহাসিক এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র সকল শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁর দূরদর্শী, সাহসী এবং ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে ২১শে নভেম্বর একটি বিশেষ গৌরবময় দিন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের সূচনা করেন। মুক্তিবাহিনী, বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যগণ ও দেশপ্রেমিক জনতা এই সমন্বিত আক্রমণে একতাবদ্ধ হন। দখলদারবাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতিবছর ২১ নভেম্বর ‘সশস্ত্রবাহিনী দিবস’ পালন করা হয়।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। সেনাবাহিনীর জন্য তিনি মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মড স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং স্কুলসহ আরো অনেক সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিট গঠন করেন। তিনি চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ঘাঁটি ঈসা খাঁ উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৎকালীন যুগোশ্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য দু’টি জাহাজ সংগ্রহ করা হয়। বিমানবাহিনীর জন্য তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সুপারসনিক মিগ-২১ জঙ্গি বিমানসহ হেলিকপ্টার, পরিবহণ বিমান ও রাডার সংগ্রহ করেন।
আমরা ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে দেশে ও বিদেশে উন্নততর প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করছি। জাতির পিতার নির্দেশে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পেশাগত দায়িত্বপালনের পাশাপাশি সশস্ত্রবাহিনী দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং বিভিন্ন জাতিগঠনমূলক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালন করে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যগণ আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। আমি আশা করি, সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিটি সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন। আমি ‘সশস্ত্রবাহিনী দিবস ২০১৮’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”