সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পের জন্য নীতি সহায়তা বৃদ্ধির দাবি
সেবাশিল্প হিসেবে বাংলাদেশের পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পের অনুকূলে রপ্তানিমুখী অন্যান্য শিল্পের মতো আর্থিক সুবিধা ও প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ওশানগোয়িং শিপওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিওজিএসওএ) নেতারা। তারা বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ ব্যবসাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিলেও অদ্যাবধি এখাত আর্থিক সুবিধা ও প্রণোদনা পায়নি। তারা তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের অনুরূপ উৎসে কর, ডিউটি ড্র-ব্যাক, ইউডিএফ লোন, প্যাকিং লোন সুবিধাসহ নগদ প্রণোদনার জন্য শিল্পমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাংলাদেশ ওশানগোয়িং শিপওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিনিধি দল শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এর সাথে বৈঠককালে এ দাবি জানান। শিল্প মন্ত্রণালয়ে আজ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শিল্প সচিব মোঃ আবদুল হালিম, বিওজিএসওএ’র সভাপতি আজম জে চৌধুরী, সহসভাপতি মোস্তফা কামাল ও শেখ বশির উদ্দিন, সেক্রেটারি জেনারেল রিয়ার অ্যাডমিরাল (অবঃ) এ এস এম আব্দুল বাতেন, সদস্য মোঃ শাহজাহান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতি বা ‘ব্লু ইকোনোমি’ এর প্রসার, সমুদ্র পথে পণ্য আমদানি রপ্তানিতে ফ্রেইট চার্জ খাতে দেশীয় জাহাজের হিস্যা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয় আলোচনায় স্থান পায়।
বিওজিএসওএ’র নেতারা বলেন, সরকারের নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা পেলে দেশীয় পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পখাত দ্রুত বিকশিত হবে। বর্তমানে সমুদ্র পথে পণ্য আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্রেইট চার্জ বাবদ খরচের ৯০ শতাংশেরও বেশি বিদেশি জাহাজ মালিকরা নিয়ে যাচ্ছে। দেশিয় সমুদ্রগামী জাহাজ মালিকদের আয়করসহ অন্যান্য সুবিধা দিয়ে বছরে ফ্রেইট চার্জ বাবদ কমপক্ষে আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় সম্ভব। তারা এ শিল্পের বিকাশে সরকারের নীতি সহায়তা কামনা করেন।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আরো বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কোনো ট্যাক্স আরোপ না করলেও জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে শতকরা ৫ ভাগ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করেছে। ফলে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া, টেক্সটাইলসহ অন্যান্যখাতে কর্পোরেট ট্যাক্স ১৫ শতাংশ নির্ধারিত থাকলেও এ শিল্পখাতে তা ৩৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে। তারা সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ট্যাক্সসহ অন্যান্য বৈষম্য দূর করতে আসন্ন বাজেটে কার্যকর প্রস্তাব প্রেরণের জন্য শিল্পমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শিল্পমন্ত্রী দেশের আমদানি রপ্তানিতে সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ শিল্পে করসহ অন্যান্য অসঙ্গতি পরীক্ষা করে তা যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বরাবরে সুপারিশ করা হবে।
তিনি দেশীয় এ শিল্পের প্রসারে সরকারের নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন। হুমায়ূন আরো বলেন, সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতির সুবিধা কাজে লাগাতে শিল্প মন্ত্রণালয় পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করছে। জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙ্গা ও শিপ রিসাইক্লিং কার্যক্রমকে সরকার নীতি সহায়তা দিচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পের প্রসারেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে নতুন শিল্পনীতিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা থাকবে বলে তিনি জানান।