শৈলকুপায় আ’লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত, ৪৫টি ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট

শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ৯নং মনোহারপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে আওয়ামীলীগর দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক সংঘর্ষে ১০ মহিলাসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় প্রায় ৪৫টি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। রবিবার সকাল সাড়ে ৭টার পাইকপাড়া গ্রামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে গুরুত্বর অবস্থায় ফতেরন্নেছাসহ ৮ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। বাকিদের কুষ্টিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জানা যায়, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইসরাইল ও প্রতিপক্ষের সামাজিক মাতব্বর মতিয়ার রহমানের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিলো। এরই জের ধরে শনিবার সন্ধায় মতিয়ার সমর্থকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছুটিতে বাড়ি থাকা সেনা সদস্য আলী বিশ্বাস,স্বপন বিশ্বাস,সালাম মন্ডল ও তাজনুর মাতব্বর এর নেতৃত্বে ঢাল- সড়কিসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গ্রাম্য ক্যাইজায় জড়িয়ে পড়ে। অতর্কিত হামলায় ও সংঘর্ষে শরিফুল ইসলাম শেখ,রশিদ শেখ,রাজু হাসান,জিল্লুর রহমান, আলাউদ্দিন শেখ,মনি শেখ,সনি শেখ,তরিকুল হোসেন,ফতেরন নেছা,ইদ্রিস, সুজন, মারুফ,রেজাউল মুসল্লি,রিপন,নয়ন,বাসি,শহিদুল,হাফিজুল,আমিরুল,ইসরাইল মেম্বর, রোকেয়া বেগম, রিজিয়া, রাশিদা, তানিয়া ,ফজলু, মিলন, তরিকুল ও সাইদুলসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পাইকপাড়া গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে পাইকপাড়া গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় আবারো রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের আশংকা করছে স্থানীয়রা। শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বজলুর রহমান জানান, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি সদস্য ইসরাইল ও একই দলের গ্রাম্য মাতব্বর মতিয়ার রহমানের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে শনিবার তিনজনের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে উভয় পক্ষ ঢাল-সড়কিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ১০ নারী ও বৃদ্ধসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের কয়েকজন সমর্থক সূত্রে জানা গেছে, শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান (সতন্ত্রপ্রার্থী) শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৯নং মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফা আরিফ রেজা মন্নুর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের পর থেকেই বিরোধ চলে আসছে।
তারই জেরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নির্বাচনে সরকার সমর্থক নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার পরাজিত এবং সতন্ত্রপ্রার্থী শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা বিজয়ী হওয়ায় তার প্রধান প্রতিদ্বনদ্বী মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু চেয়ারম্যানের সমর্থকদের উপর বিজিত বাহিনী এলাকায় ভয়াভহ ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে বাড়িঘরভাংচুর ও লুটপাটের শিকার এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক আহত ৪৫টি বাড়ি ভাংচুর হয়েছে।