প্রধান মেনু

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে প্রধানমন্ত্রী ও  রাষ্ট্রপতির বাণী

প্রধানমন্ত্রীর বাণী:  ঢাকা, ২৮ অগ্রহায়ণ (১৩ ডিসেম্বর) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন: “আজ ১৪ই ডিসেম্বর। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে নামে। তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। আমি শহিদ বুদ্ধিজীবীসহ সকল শহিদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। জাতি চিরদিন তাঁদের এই আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৪ বছরের পাকিস্তানি বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দেশের আপামর জনসাধারণকে সংগঠিত করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জামাতসহ ধর্মান্ধ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

তারা আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে পাক হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করার পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ করে। বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে তারা দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ দেশের মেধাবী সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লাহ কায়সার, গিয়াসউদ্দিন, ডা. ফজলে রাব্বি, আবদুল আলীম চৌধুরী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরদাসহ আরো অনেকে।

স্বাধীনতা বিরোধীরা এই পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্যদিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। বাংলাদেশ যাতে আর কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেটাই ছিল এ হত্যাযজ্ঞের মূল লক্ষ্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের এই পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। মুক্তমনা, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। এই সন্ত্রাসী-জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে দেশব্যাপী আগুন সন্ত্রাস চালায়। এখনও তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। আমরা দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছি।

কোনো ষড়যন্ত্রই জাতিকে এ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। এই কুখ্যাত মানবতাবিরোধীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদেরও একদিন বিচার হবে। এসব রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে। আসুন, দল-মত নির্বিশেষে ’৭১-এর ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামাতচক্রের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। এটাই হোক ২০১৯ সালের শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

 রাষ্ট্রপতির বাণী :  রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন: “১৪ ডিসেম্বর, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এ দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি শহিদ বুদ্ধিজীবীদের, যাঁরা ১৯৭১ সালে বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন। আমি তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে বহু আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তি সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করেন।

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁরই আহ্বানে গোটা জাতি মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনে চূড়ান্ত বিজয়। হানাদার বাহিনী তাদের নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করতে পেরে জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন উদ্দেশ্যে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী-সহ বহু গুণীজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতি হারায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে এ এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। বুদ্ধিজীবীরা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির রূপকার। তাঁদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, উদার ও গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা জাতীয় অগ্রগতির সহায়ক। জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ প্রদান-সহ বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে বিপুল অবদান রাখেন।

কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদারবাহিনী পরিকল্পিতভাবে এ দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতির জন্য এ-এক অপূরণীয় ক্ষতি। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সমাজ গড়তে পারলেই তাঁদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে। বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের পথ বেয়ে বাংলাদেশ সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত হলেই তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ হবে। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ, চিরজীবী হোক।’’