রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

ঢাকা, ১২ পৌষ (২৭ ডিসেম্বর) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০১৮’ প্রদান অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০১৮’ প্রদান করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। আমি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত শিল্প উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন জানাই।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো। স্বাধীনতার পরে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে শ্রমঘন শিল্পায়নের ধারা বেগবান করে টেকসই ও সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার দেশব্যাপী শিল্পখাতের কার্যকর বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত শিল্পায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬ প্রণয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি খাতভিত্তিক পৃথক নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। আমাদের সরকারের গৃহীত শিল্পনীতি ও কর্মসূচির ফলে দেশে টেকসই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পখাত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে এগিয়ে আছে। ২০২১ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্পখাতের অবদান বর্তমান ৩৫.১৪ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে আমাদের সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
সারা বিশ্বে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারা চলছে। এই বিপ্লব শিল্প উৎপাদনে ব্যাপক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এনেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক টেকনোলজির ব্যবহার শিল্প উৎপাদনের ধারা পাল্টে দিয়েছে এবং আগের তুলনায় উৎপাদনশীলতা অনেক বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাই এসব প্রযুক্তির ব্যবহারে এগিয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশেও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের শিল্প-কারখানায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে। এ ধারা এগিয়ে নিতে আমাদের সরকার সম্ভব সব ধরনের নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে দেশের শিল্পখাত উজ্জীবিত হচ্ছে এবং জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের ধারা বেগবান হচ্ছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদানও আমাদের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও নীতি সহায়তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মাধ্যমে আমি মনে করি, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা শিল্পখাতে তাদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে অনুপ্রাণিত হবেন। তাঁরা নিজ নিজ শিল্প-কারখানায় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মনোযোগী হবেন এবং উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করে রপ্তানি বৃদ্ধিতেও অবদান রাখবেন। ফলে একদিকে যেমন উদ্যোক্তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবেন, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে। দেশে নতুন শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়াস জোরদার হবে বলে আমার বিশ্বাস।
শিল্পায়নে চলমান ধারা অব্যাহত রেখে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে শিল্পসমৃদ্ধ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্ষম হবো, ইন্শাআল্লাহ।
আমি ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০১৮’ প্রদান অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”