প্রধান মেনু

ময়মনসিংহে মহাসড়কে চার কিলোমিটার দীর্ঘ আলপনা

গফরগাঁও( ময়মনসিংহ)  প্রতিনিধি: ৪২টি বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসে ময়মনসিংহের নান্দাইল পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থী। তাদের ঘাস ফড়িং সংগঠনের অনুপ্রেরণায় এবার একই বিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের চার কিলোমিটার আলপনা এঁকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

গ্রীনেজ বুকে নাম লেখানো ছাড়াও বাল্যবিয়ে, মাদক নির্মূল ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে সচেতনতা বৃদ্ধিতে তাদের এই আয়োজন।
১৩ এপ্রিল শুক্রবার ভোর থেকে ওই মহাসড়কটি শিক্ষার্থী নিজেরাই ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করে দল বেঁধে নেমে পড়ে সাত রঙ হাতে নিয়ে। আগামীকাল পয়লা বৈশাখ। ১৪২৫ বঙ্গাব্দ। বাঙালির বাংলা নববর্ষ। দিনটিকে সারা বছর আগলে রাখতে নিজ হাতে তুলি নিয়ে কাঠফাটা রোদে প্রায় ১০ ঘণ্টা সড়কে থেকে ৪০টি দলে ভাগ হয়ে এ কাজটি করে ফেলে। সকাল ৬টা থেকে টানা বিকেলে ৩টা পর্যন্ত চলে এ কর্মযজ্ঞ।
সকাল ৬টা। ছাত্রীদের হাতে রঙের বালতি, তুলি, চক, ঝাঁটা ইত্যাদি।

৪০টি দলে বিভক্ত হয়ে একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের ফটক গলিয়ে বের হতে শুরু করে। সাত সকালে বিপুল সংখ্যক ছাত্রী প্রতিষ্ঠান থেকে দলে দলে বের হওয়ার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে প্রাতঃভ্রমণরত লোকজনের চোখ ছানাবড়া। এ সময় মাথার ওপর ‘ড্রোন’ চক্কর দিতে দেখে উপস্থিত অনেকেই আঁতকে ওঠে। এই যন্ত্রটির সাহায্যে যে আলপনা আঁকার দৃশ্য ধারণ করা হচ্ছে তা কারো জানা ছিল না। এ ধরনের একটি নতুন দৃশ্য সবার মাঝে উৎসাহ সৃষ্টি হয়।

বিদ্যালয়টির অবস্থান নান্দাইল উপজেলা পরিষদের সামনে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে। বিদ্যালয়ের মূল ফটকটির মধ্যস্থলে (জিরো পয়েন্ট) রেখে ছাত্রীদের ৪০টি দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে মহাসড়কের পূর্ব ও পশ্চিমে অবস্থান নেয়। সড়ক  পরিষ্কার করে ছাত্রীদের দলনেতা নকশা দেখে চক দিয়ে আলপনা আঁকার প্রাথমিক কাজ শুরু করেন।

দলের অন্যরা মহাসড়কের চার কিলোমিটার এলাকায় একসঙ্গে  আলপনা আঁকার কাজ শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে আলপনার রঙে রাঙিয়ে যায় মহাসড়কে একপাশ। ব্যস্ত মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়। বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার দৃষ্টি পড়ে আঁকিয়েদের ওপর। দূরগামী বিভিন্ন যানবাহন ব্যস্ত মহাসড়কে থেমে আলপনা আকার দৃশ্য দেখে ক্ষণিকের জন্য যানবাহন থামায়। পরক্ষণই নিজেদের হাতে থাকা মোবাইল  ক্যামেরায় আলপনা দৃশ্য ধারণ করে নিয়ে যায়। ঘটনার সাক্ষী হতে সকাল থেকেই উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ ৯ নান্দাইল আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো. আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন, তাঁর সহধর্মিনী জেবে নাইয়ার তৃণা ও দুই সন্তান আইমান আবেদীন খান তনয় ও সাবিয়া নাইয়ার খান ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান, পৌর মেয়র রফিক উদ্দিন ভূঁইয়াসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এমপি তুহিন বলেন, ‘সামনে প

য়লা বৈশাখ রেখে এই আয়োজন সত্যিই সারা বিশ্বে ব্যতিক্রম। এই রকম আয়োজন পৃথিবীর কোথাও হচ্ছে বলে মনে হয় না। অনেকেই অনেকভাবে ব্যতিক্রম আয়োজন করে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চায়। নান্দাইল পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের এই মেয়েরা সকল বাঁধা উপেক্ষা করে ব্যস্ততম মহাসড়কে এক হাজার ছাত্রীর অংশগ্রহণে দীর্ঘ ৯ ঘণ্টাব্যাপী চার  কিলোমিটার আলপনা এঁকে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তাদের এই কর্মকাণ্ডটি গিনেজ বুকে রেকর্ডভুক্ত করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

দশম শ্রেণির ছাত্রী দ্বীপানিকা দ্বীপ, অর্থময়ী দে ফারিয়া আফরিন, মৌসুমি আক্তার, আফসানা শারমিন, ফারহাত তাসনিম লামিসা, আফসানা শারমিন, আদিয়া সুলতানা ও নুসরাত জাহান রিয়ারা বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে আলপনার মাধ্যমে ফুঁটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। পুরো দলের নেতা দীপান্বিতাা দীপ জানায়, গত বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের নদীয়ায় ২.০৯ কিলোমিটার সড়কে আলপনা এঁকে গিনেজ বুকে নাম উঠায়। সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টায় নান্দাইল পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের এক হাজার শিক্ষার্থী।

আলপনা আঁকার  সব ধরনের রঙের যোগান দিয়েছে আরএফএল-এর রেইনবো পেইন্টস। তার চিফ  অপারেটিং অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পয়লা বৈশাখকে রঙে রাঙাতে বিশেষ করে বালিকাদের বিশ্ব রেকর্ড গড়তে এই আয়োজনে থাকতেই তাদেরকে রেইনবো রঙ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। ভালো সকল কাজের সঙ্গে রেইনবো পেইন্টস সবসময় এগিয়ে থাকে। আগামীতেও থাকবে।

নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল খালেক বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের সাত শিক্ষার্থী ঘাস ফড়িং সংগঠনের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে সারা দেশে আলোচনায় এসেছে। তাদের অনুপ্রেরণা নিয়েই পুরো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উদ্যোগ নেয় চার কিলোমিটার সড়কে আলপনা আঁকার। এই কর্মের মাধ্যমে তারা জানাতে চায় বাল্যবিয়ে রোধ, মাদককে না ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ‘