মুজিবনগর থেকে মজিবনগর বিড়ম্বনার অবসান হয়নি একযুগেও

মজনুর রহমান আকাশ, মেহেরপুরঃ মেহেরপুরের মুজিবনগর। যেখানে উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। এক সময়কার বৈদ্যনাথ তলাকে স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবর রহমানের নামে নাম করণ করা হয় মুজিবনগর। সরকারী বেসরকারী এমনকি সারা বিশ্বে মুজিবনগর হিসেবে এ স্থানের নাম থাকলেও এলাকার লোকজনের জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থানটির নাম মজিবনগর লেখা হয়েছে।
একযুগ ধরেও নামের সংশোধন না করায় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার চিঠি চালাচালি হলেও কোন সদুত্তোর মেলেনি নির্বাচন কমিশন থেকে। ১৯৭১ সাল। পাকিস্তানের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে নিজেদেরকে মুক্ত করতে শেখ মুজিবর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দামাল ছেলেরা ঝাপিয়ে পড়েছিল মুক্তি যুদ্ধে।
১০ এপ্রিল অস্থায়ি সরকার গঠিত হলেও ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশ স্বাধীনের পর বিশ্বের দরবারে বৈদ্যনাথতলাকে তুলে ধরতে শেখ মুজিবর রহমানের নামে নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। সরকারী বেসরকারী স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান এমনকি বিশ্বে মুজিবনগর হিসেবে পরিচিত হলেও স্থানীয় ভোটারদের হালনাগাদ ভোটার তালিকার মজিবনগর লেখা হয়েছে। ২০০৭ সালে ছবি যুক্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করার সময় টাইগার আইটির মাধ্যমে সফটওয়ার প্রস্তুত করা হয়। সে সময় নির্বাচন কমিশন বিষয়টি অবলোকন না করায় মুজিবনগর উপজেলার স্থলে মজিবনগর লেখা হয়।
একযুগ ধরে বিকৃত নাম সংবলিত জাতীয় পরিচয়পত্র বহণ করছেন এলাকাবসি। এতে করে নানা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন তারা। ভোগান্তির স্বীকার ছাত্র আহসান ও মঞ্জুর জানান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত সনদে উপজেলার নাম মুজিবনগর লেখা হয়েছে অথচ ভোটার আইডি কার্ডে মজিবনগর লেখা থাকায়
অফিশিয়াল কাজ ও বিভিন্ন চাকরীর আবেদনপত্র বাতিল হয়। সংশোধনের আবেদন জানিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসি হাজি প্রিন্স জানান,একটি জাতীয় পরিচয়পত্র একজনের পরিচয় বহণ করে না। এটা দেশ ও জাতীয় পরিচয় নিশ্চিত করে। আর সেই পরিচয় পত্রেই ভুল করা হয়েছে। তাছাড়া স্বাধীনতার স্থপতির নামটিই লিখতে ভুল করা হয়েছে। বিকৃত করা হয়েছে মুজিবনগর তথা অস্থায়ি রাজধানীকে। এর দ্বায়ভার কার ? একযুগেও এর সমাধান হয়নি।
অস্থায়ী সরকারের গার্ড অব অনার প্রদানকারী মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন জানান, স্বাধীনতার জন্য জিবন দিয়েছে লাখ লাখ দামাল ছেলেসহ এ বাংলার মানুষ। স্বাধীনতার জন্য যিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন সেই মহা নায়ক বঙ্গবন্ধুর নাম চীর স্মরণীয় রাখতে বৈদ্যনাথ তলার নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। অথচ সেই মহা নায়কের নামটিই বিকৃত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন অফিসারকে বার বার জানানোর পরও কোন সুরাহা হয় নি। এ টা বড়ই দুঃখজনক।
মুজিবনগর বাগোয়ান ইউপি ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, ঐতিহাসিক মুজিবনগরের নাম ভুল করে লিখে এলাকার ৭৩ হাজার ভোটারের ভোগান্তি দেয়া হচ্ছে। অনেকেই এটির সংশোধনের জন্য তার শরণাপন্ন হচ্ছেন। কিন্তু সংশোধনের কোন পদ্ধতি নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বঙ্গবন্ধুর নামের ভুল মানেই স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা।
মেহেরপুর সরকারী কলেজের সমাজ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ধুমকেতু জানান,একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ম রাস্ট্রের অনেক কিছু নির্ভর করে একটি নামের উপর। যার জন্ম না হলে স্বাধীনতার স্বাদ পেতাম না সেই নামের ভুল মেনে নেয়া কষ্টকর। এ ভুলের কারণে নানা ভোগান্তিতে পড়বে সকল মানুষ। যে স্মার্ট কার্ডটি একদিন পাসপোর্টের আদলে ব্যবহার হতে পারে সেটিতে ভুল কারো কাম্য নয়। এটার সংশোধন হওয়া জরুরী।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুল আজিজ জানান,২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কমিশন ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজ হাতে নেয়। সে সময় মুজিবনগর নামটি ভুলে মজিবনগর হয়। প্রথমে কেউ না দেখলেও পরে বিষয়টি জানতে পেরে অনেকেই সংশোধনের জন্য অফিসে আসেন। কিন্তু যে সফটওয়ারটি দিয়ে কাজ করা হয়েছে সেটির মাধ্যমে সংশোধন করা যাচ্ছে না। সার্ভারে নিচ্ছে না। বিষয়টি পত্র মারফত উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আতাউল গণি জানান, ঐতিহাসিক মুজিবনগর নামটির বানানে বিভ্রান্তি ঘটেছে সেটি আজই জানলাম। স্বাধিনতার স্থপতির নামটি ভুৃল হয়েছে এটা দুঃখ জনক। এটির সংশোধনীর জন্য তিনি পত্র প্রেরণ করবেন বলেও জানান।