মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলা,পুকুর দখলের চেষ্টা

হাতীবান্ধা(লালমনিরহাট)প্রতিনিধিঃ জেলার হাতীবান্ধায় মহিলা আ,লীগের সভানেত্রীর নেতৃত্বে এক মুক্তিযোদ্ধার পুকুল দখলের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসময় পুকুরটির চারপাশে থাকা টিনের বেড়া ভাংচুর ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলা চালানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের হাতীবান্ধা রেল ষ্টেশনের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। এনিয়ে থানায় অভিযোগ দেয়ার পরও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের পরিবার। ভুক্তভোগিরা বলছেন, ’পুকুর দখলে নেতৃত্ব দেয়া আমিনা বেগম স্থানীয় ডাউবাড়ি ইউনিয়ন মহিলা আ,লীগের সভানেত্রী। সেই সুবাধে প্রভাব খাটিয়ে পুকুরটি দখল করে তার মেয়ে -জামাইকে নিয়ে দিতে চাইছেন তিনি’। জানা যায়, দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান নিজ বাড়ির অদূরে হাতীবান্ধা রেল ষ্টেশন এলাকায় একটি পুকুর (জলাশয়) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। ওই পুকুরের পাশেই বসবাস করছেন ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন মহিলা আ,লীগের সভানেত্রী আমিনা বেগমের মেয়ে-জামাই আশরাফ ও সাদিয়া আফরিন।
ফলে ওই দম্পতির চোখ পড়ে মুক্তিযোদ্ধার লিজ নেয়া সেই জলাশয়ে। একপর্যায়ে তারা শুক্রবার বিকেলে পুকুরটির চারপাশে থাকা টিনের বেড়া ভাংচুর করে দখলের চেষ্টা করেন। এনিয়ে আশরাফ- সাদিয়াসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে শুক্রবার হাতীবান্ধা থানায় অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান। আর ওই অভিযোগের খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে মহিলা আ,লীগের সভানেত্রী আমিনা বেগমের নেতৃত্বে দিনদুপুরে পুকুর দখলের চেষ্টাসহ দ্বিতীয় দফা টিনের বেড়া ভাংচুর চালানো হয়। এসময় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা বাঁধা দিতে এলে তাদের উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাতীবান্ধা ষ্টেশন এলাকায় টেন্ডারকৃত প্লট নং- ৫২ তে ০.১৫ একর জলশায়টি লালমনিরহাট রেলওয়ে ভূ-সম্পতি বিভাগ থেকে ৫ বছরের জন্য স্থানীয় শওকত আলীকে লিজ দেয়া হয়। তবে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে শওকত আলী ওই জলাশয়টি প্রতিবেশী বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের কাছে লিজের স্বত্ত লিখিতভাবে বিক্রি করেছেন।
সেঅনুযায়ী রেলওয়ের কাছে পুকুরটি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন পুকুরের পাশে বসবাসকারী মহিলা আ,লীগের সভানেত্রীর মেয়ে সাদিয়া আফরিন ও জামাই আশরাফ আলী। একপর্যায়ে তারা পুকুরটি নিজেদের বলে দাবি করেন। পাশাপাশি বাড়ির ময়লা আর্বজনা পুকুরে ফেলে পানি দুষিত করে মাছের ক্ষতি সাধন হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করে মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান। এনিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান রেলওয়ে কর্তৃক ওই জলাশয়ের বৈধ কাগজপত্র (যাহার স্বারক নং-ল্যান্ড/লাল/জলাশয়/নাম পরিবর্তন/হাতীবান্ধা/১৯/২৪১) সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমি চাকুরি থেকে অবসার নেয়ার পর আর্থিক সংকটের মাঝে পরিবারের সদস্যদের চালিয়ে নিচ্ছি। সেকারণে প্রতিবেশী শওকত আলী আমাকে প্রথমে জলশয়টি ষ্ট্যাম্পের মাধ্যমে ডিড করে দেন এবং পরে রেলওয়ে লালমনিরহাটের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ সেই নাম পরিবর্তন করে আমাকে দুই বছরের জন্য লিজ দিয়েছেন। কিন্তু পুকুরের পাশে বসবাসকারীরা আ,লীগ সভানেত্রীর মেয়ে-জামাই হওয়ায় আমার পকুরটি দখলের চেষ্টসহ একের পর এক ক্ষতি করছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তহীনতার ভুগছি। এখন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারের কাছে আমি ন্যায় বিচার দাবি করছি’। একই এলাকার শওকত আলী যুগান্তরকে বলেন, পুকুরটি আমি ৫ বছরের জন্য লিজ পেয়েছিলাম।
পাশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা থাকায় তাঁর সম্মানে তাকে ষ্ট্যাম্পের মাধ্যমে ডিড করে দেই। পরবর্তীতে বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাটের ভূ- সম্পত্তি বিভাগ যথাযথ নিয়মে লাইসেন্স ফি নিয়ে তাঁকে(মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান) বৈধ কাগজপত্র দিয়েছেন বলে জানি। এদিকে মহিলা আ,লীগের সভানেত্রী আমিনা বেগম ও তার মেয়ে সাদিয়া আফরিনের কাছে ওই পুকুরের জন্য রেলওয়ে কর্তৃক বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা সাংবাদিকদের তা দেখাতে অপরাগত প্রকাশ করেন। এক প্রশ্নে জবাবে তারা দাবি করে বলেন, ‘যার বাড়ির পাশে রেলওয়ের পুকুর থাকবে সেই বাড়িওয়ালা পুকুরের লিজ পাবে। এতে কেউ বাঁধা দিতে এলে দেখা যাবে”। হাতীবান্ধা থানার ওসি ওমর ফারুক মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন, ‘এনিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে’।