প্রধান মেনু

মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের ব‌্যাক্তিদের কাউন্সিলর করা সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন স্থগিত

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী প্রতিনিধি ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের ব‌্যাক্তিদের কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়ন করা সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে প্রেক্ষিতে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে সমঝতা না হওয়ায় এবং সমর্থকদের মধ্যে টান টান উত্তেজনার কারনে অপ্রীতিকর ঘটনার এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে পুলিশ ক্লাবে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয়অধিবেশনে ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি উপস্থিত সকল কাউন্সিলরদের উদ্দেশে‌ দেয়া বক্তবে‌ এ কথা বলেন। এসময় উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হলেও নতুন কমিটি ঘোষনা না করেই সম্মেলন শেষ করা হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে। সম্মেলনের প্রধান অতিথি ও জেলা কমিটির শীর্ষ নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচনের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ হওয়ায় কমিটি ঘোষনা ছাড়াই ওই সম্মেলন সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়।

সেই সঙ্গে সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষনা করে জেলা কমিটির নিয়ন্ত্রনে নেয়া হয়েছে। জানা যায় সভাপতি পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে ছিল সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আখতার হোসেন বাদল, সহ সভাপতি সেকেন্দর আলী, সদস্য রাশেদুজ্জামান রাশেদ, আজমল হোসেন। সাধারন সম্পাদক পদে ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমিম ও কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জিকো আহম্মেদ। স্থগিতের বিষয়ে মন্তব্য করে দ্বিতীয় অধিবেশনের সভাপতি এ‌ডভোকেট মমতাজুল হক তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন যাচাই-বাছাই শেষে সঠিক কাউন্সিলর নির্বাচন করে সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল পূণঃরায় অনুষ্ঠিত হবে। ততদিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগকে দেখভাল করবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ জানান ঘটনাটি কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবগত করে পরবর্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এদিকে সকালে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগীয় সংস্থার মাঠে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, দলে আমরা আদর্শবান মানুষ চাই। ভূমিদস্যু, জুয়াড়ি ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের আমাদের দলে চাই না। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা যাতে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। কেননা জামায়াত-বিএনপি এখনও নানা প্রকার ষড়যন্ত্র করে চলেছে। সে সাথে জঙ্গীবাদি গোষ্ঠী দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

আওয়ামীলীগ নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে হবে, তা নাহলে দেশ আবারো ষড়যন্ত্রের শিকার হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের দায়িত্ব হচ্ছে দলকে সুসংগঠিত করা। ক্যাসিনো কেলেংকারী থেকে অনেক কিছুই হচ্ছে। তাই আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের আত্মশুদ্ধির সময় এসেছে, আমাদের আত্মসংযমী হতে হবে। অন্যায়কারী কখনো মহৎ নেতা হতে পারে না। দেশে দূর্নীতি, অবিচার ও অনিয়ম বন্ধে দলীয় নেতাকর্মীদেরকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। তাই কাউন্সিলের মাধ্যম ভাল মানুষদের দলের নেতৃত্বে আনতে হবে। সম্মেলন বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও নীলফামারী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাবেয়া আলীম এবং নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক।

সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আলহাজ্ব মোঃ আব্দুস সামাদ মন্ডল এর সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাংগঠনিক প্রতিবেদন তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য দেন সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আখতার হোসেন বাদল। এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম বাবু ও সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক। এর আগে মৃত্যুবরণকারী আওয়ামী লীগ নেতা স্মরণে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী। এরপর এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এফাজ উদ্দিন সরকারের উপস্থাপনায় সম্মেলন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নীলফামারী জেলাসহ অন্যান্য উপজেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর উপজেলা আওয়ামীলীগের এ সম্মেলন উপলক্ষ্যে তৃনমূল নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল। একারণে অনেক আগ্রহ নিয়ে নবীণ-প্রবীন সর্বস্তরের আওয়ামীলীগ সমর্থক মানুষেরা উপস্থিত হয়েছিলেন সম্মেলনে। বিগত কয়েক দিন থেকে চলছে সরগরম অবস্থা। সম্মেলন স্থল রেলওয়ে মাঠ, রেলওয়ে পুলিশ ক্লাবসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো মনোরমভাবে সাজানো হয় এবং সকালে একটি আনন্দ র‌্যালী বের হয়ে পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু সর্বশেষ সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় ভাঙ্গা মন নিয়ে আগতদের বাড়ি ফিরে যেতে দেখা গেছে।