প্রধান মেনু

মাদারীপুরে আড়িয়াল খা নদে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন

কাজী জাফর, মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ প্রতিনিয়ত আড়িয়াল খাঁ’র পেট থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে নদী । যায় কারণে একের পর এক দেখা যাচ্ছে নদী ভাঙনের দৃশ্য।ফলে গৃহহীন হয়ে পরছে নদীর পাড়ের বাসিন্দারা।নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি রাস্তা ও ব্রীজ। এদিকে প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেনা ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা। স্থানীয় পর্যায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর শহর সংলগ্ন আড়িয়াল খা নদ থেকে নিয়মিত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। যা আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু ব্যবসার একটি সারাজ্য গড়ে তুলেছেন কয়েকজন প্রভাবশালী।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এরা কাউকে তোয়াক্কা না করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারন লোক তো দুরের কথা প্রশাসনও অনেক সময় এদের বাধা দিতে হিমসিম খাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ফাঁসিয়াতলার নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে “হাওলাদার এন্টারপ্রাইজ” নামের ড্রেজার। যায় মালিক কালকিনি পৌর মেয়রের ভাই বেলায়েত হাওলাদার। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েক বছর ধরেই বেলায়েত হাওলাদার নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তলন করছে। যার কারণে নদীর আসপাশে ব্যাপক ভাঙনের দৃশ্য রয়েছে।ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন তারা ক্ষমতাবান, ভয়ে কিছু বলতে পারিনা। প্রশাসন ও তাদের কিছু বলে না।

অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, রাজৈর উপজেলার শাঁখারপাড়, মল্লিক কান্দি গ্রামের সরকারি পাকা সড়ক আড়িয়াল খাঁ নদীর তীর ঘেঁষে। নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সে রাস্তার কয়েক কিলোমিটার নদী গর্ভে চলে গেছে। নদীর তীরেই ছিলো ড্রেজার মেশিন। ড্রেজার মালিক কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমাদের দোষ কি আমাদের ভাড়া করে আনা হয়েছে। কে ভাড়া করেছে এর উত্তরে বলেন, মাদারীপুর জেলা যুবদলের নেতা মনিরুজ্জামান ফকু সে আমাদের এনেছে। ফকু বলেন, আমরা প্রশাসন ম্যানেজ করেই ব্যবসা করছি।

নদীর পারের বাবুল মুন্সি, শুকুরণ নেসা, রবি সিকদার, সেপাই মল্লিক বলেন, কিছুদিন আগে ড্রেজার মেশিন একটা পুরিয়ে দিয়েছিলো পুলিশ, তারপরেও এখান থেকে বালু উত্তোলন থামছে না। আমাদের রাস্তা গেছে অনেক ঘর ভেঙেছে তবুও এর কোন প্রতিকার নেই। দিনে পুলিশ আসলে পালিয়ে যায় এরপরে রাতে বালু উত্তলন করে। কোনো ভাবেই থামছে না এ নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তলন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত একটি বালু খেকো সিন্ডিকেট কারো তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদ থেকে বালু উত্তোলন করে আসলেও এরা বরাবরই রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিষয়টি বার বার প্রশাসনকে অবহিত করার পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বরং বালু দস্যুরা বেপরোয়া ভাবে তাদের বালু উত্তোলনের কাজ চালিয়ে আসছে। যে কারনে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদের পাড়ের বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, গাছপালা ,জায়গা জমি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদের পাড়ের রাস্তা ঘাট।

হুমকির মুখে পড়ে সাখারপাড় এলাকায় কুমার নদের ওপর প্রায় সাড়ে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রীজ। কুমার নদে অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে এলাকাবাসী বার বার বিক্ষোভ, মানববন্ধন, স্মারকলীপি পেস সহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও অজ্ঞাত কারনে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বালু খেকোরা আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। অবশ্য গণমাধ্যম এবং স্যোসাল মিডিয়ায় অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর প্রকাশ হলে মাঝে মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামকাওয়াস্তে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়।

গত শুক্রবার (২৯.১১.১৯) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক এর নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ পারভেজ হোসেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় আড়িয়াল খাঁ নদে রাজিব হাওলাদারের একটি ড্রেজার আটক করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় ওই এলাকা থেকে বালু উত্তোলনকারী আরো ৪টি ড্রেজার পালিয়ে যায়। ওই ড্রেজারটি যেখান থেকে আটক করা হয় সেখানে আরো ৫টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছিলো। পুলিশসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ট্রলার যোগে যাওয়ার খবর পুর্বেই বালু উত্তোলনকারীদের গ্রোড়াইন ঘাট থেকে জানিয়ে দেওয়ায় বালি উত্তোলন ছেড়ে অবশিস্ট ড্রেজারগুলো হুটহাট পালিয়ে যায়।

গত ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় জেলার রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নের নীলাম্বরদী এলাকায় কুমার নদে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একটি ড্রেজার মেশিন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া, দেড় কিলোমিটার পাইপ কেটে ধ্বংসসহ দুই বালু ব্যবসায়ীকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নদী পারের বাসিন্দারা জানায়, আজ ম্যাজিস্ট্রেট এসে মাত্র একজনকে জরিমানা করেছে, তবে প্রতিদিন এবং নিয়মিত ৮ থেকে ১০ টা ড্রেজার বালু উত্তোলন করে আসছে। কাল থেকে আবারও একাজ করবে। আর যারা এ কাজ করছে তারা সবাই মাদারীপুরের প্রভাবশালী নেতার লোক, কাজেই এই অবৈধ কাজ বন্ধ করা খুবই দুরহ ব্যাপার।

ভুক্তভোগীরা জানায়, মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালালেও অভিযানের পর যা তাই। বালু সিন্ডিকেট এতই প্রভাবশালী যে কেউ তাদের প্রতিরোধ করতে পারছেনা। রাজনৈতিক লেবাসে তার এ অপকর্ম করলেও বরাবরই এরা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, তাহলে কি মাদারীপওে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হবেনা ? এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, যেহেতু মাদারীপুর জেলায় কোন বালু মহাল নেই কাজেই যেখান থেকেই বালু উত্তোলন করা হোক তাই অবৈধ। আমারা প্রতিনিয়ত এ অবৈধ কাজ থেকে বিরত রাখার চেস্টা করছি।

এর আগেও রাজৈর, কালকিনি, শিবচরসহ মাদারীপুরে বালু ইত্তোলনকারীদের ধরে জেল জরিমানা করা হয়েছে। তবে এটা বন্ধ করতে হলে জনগনকে আরো সচেতন ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আমরা চেস্টা করছি জরীপ করে বালু মহাল ঘোষনা করে তা ইজারা দেওয়া যায় কিনা তাতে সরকারের রাজস্ব আসবে ও বালু ব্যবসায়ীদেরও সুবিধা হবে। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থাসহ অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করবে প্রশাসন, এমনটাই আশা করছে মাদারীপুরের সচেতন নাগরিকরা।