প্রধান মেনু

ভয়ংকর আদম ব্যবসায়ির ধোকাবাজিতে শতাধিক যুবকের স্বপ্ন ভঙ্গ

শামীমুল ইসলাম শামীম,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ১০আগষ্ট ২০২০ঃ পরিবারের একটু অর্থনৈতিক সচলতা, একটু হাসি খুশী মুখ, একটু সাচ্ছন্দে চলার নিশ্চয়তা। বেকারত্বের বোঝা দূর হওয়া।এই টুকু মাত্র আসা ভরসাকে পরিপূর্ণ করার জন্য বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখে প্রবাসে পাড়ি জমানোর। এই দুর্বলার সুযোগ নিয়ে ঝিনাইদহের টিটো নামে একজন শত শত মানুষকে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। তার প্রতারনার খপ্পরে পড়ে মালায়েশিয়া পানি পথে যেতে সাগরে সলিল সমাধি হয়েছে অনেকের জীবন।

আজ ঝিনাইদহের সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর, গাড়ামারা, তেতুলবাড়িয়া, মিয়াকুন্ডু গ্রামের প্রায় ২০/২৫ টি পরিবার তাদের প্রিয় জন হারিয়ে নির্বাক। অনেকে বিশ্বাস করতে চাই না তার স্বামী আর ফিরে আসবে না, মা বাবা পথ চেয়ে বসে আছে তার সন্তান ফিরে আসবে। এরা অনেক বার ঝিনাইদহের স্থানীয় প্রশাসনের নিকট ধর্না দিয়েছে। কিন্ত হয়নি তার কোন কুল কিনারা। এই টিটোর নেট ওয়ার্ক এর বিস্তার ঝিনাইদহ থেকে শুরু করে ঢাকা হয়ে টেকনাফ অবধি বিস্তারিত। তারপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।

বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে অনেকের নিকট থেকে টাকা নেয় কিন্ত তার মধ্যে থেকে দুই একজন কে পাঠিয়ে বাকিদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে থাকে। কখন কার টাকা ফেরত দেয় আবার কার টাকা ফেরত দেয় না। এই ভাবে সে গড়ে তুলেছে বাড়ি গাড়ি সহ সম্পদের পাহাড়। তার বাড়ি আছে ঝিনাইদহ শহরের চাকলা পাড়ায়, ঢাকা সহ নিজ গ্রামে। সে ঝিনাইদহে ঘুরে বেড়ায় দামি গাড়িতে। তার সাথে থাকে অনেকে। তার শক্তিশালী নেট ওয়ার্কে যুক্ত আছে সাংবাদিক সহ প্রভাবশালী অনেকে। যার কারনে অসহায় মানুষের বোবা কান্না করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

অনেক বার মিডিয়ার আলোচনায় উঠে এসেছে এই টীটোর নাম। কিন্ত কি এক অজ্ঞাত কারনে সে থেকে গেছে ধরা ছোয়ার বাইরে।

টিটোর পুরা নাম শাহিনুর রহমান টিটো। সে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের ইউসুফ বিশ্বাসের ছেলে। টিটোর খপ্পরে পড়ে পানি পথে মালায়েশিয়া যেতে যেয়ে জীবন নিয়ে ফিরে এসেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ধোপাবিলা গ্রামের আব্দুর রহিম। তার নিকট থেকে জানা যায় দুর্বিষহ জীবনের লোহমর্ষ নির্মম কাহিনী। যা পাথর হৃদয় গ্রস্ত মানুষকেই প্রকম্পিত করে।

ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ড উপজেলার হামিরহাটি গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে বাবুল আখতার জানায় যে ২০১১ সালে বিশেষ যাওয়ার জন্য ৪ কিস্তিতে নগদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং ১৪/১২/২০১১ তারিখে ব্যংকের মাধ্যমে ১ লক্ষ টাকা টিটোকে দেই। সে আজ অবধি আমাকে বিদেশ পাঠাতে পারে নাই এবং আমার পাওনা টাকা ফেরত দেয়নি আজও অবদি। এই প্রসঙ্গে চাঁদপুর ইউনিয়নের ইউপি সদর আব্দুল হাকিম ও কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হায়দার আলী থেকে কয়েকবার শালিস হয়েছে তারপরেও সে ঘুরা ঘুরি করে আমাকে ঐ টাকা ফেরত দেয়নি।

আরেক ভুক্তভোগী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গাড়ামারা গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম জানান, মানব পাচারকারী টিটো আমার ছোট্ট ভাই সাজেদুর কে মালায়েশিয়া নিয়ে যেয়ে ভাল চাকুরি দেবে বলে প্রথম কিস্তিতে ৫০ হাজার এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে ১ লক্ষ টাকা প্রদান করার কিছুদিন পর বলে যে ভিসা এসে গেছে বলে মোবাইলে জানালে তখন টিকিট বুকিং বাবাদ ৮০ হাজার টাকা ১৯/০২/২০১২ তারিখে তাকে দেই। এই ভাবে তাকে মোট ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেই। কিন্ত সে আমার ভাইকে বিদেশে পাঠান নি। এই টাকা ফেরতের ব্যপারে অনেক গ্রামে শালিস হয়েছে কিন্ত তাতে কোন ফল হয়নি।

কালীগঞ্জ উপজেলার বাকুলিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে আব্দুল আজিজ জানান, প্রবাসী হওয়ার কারনে তার সাথে সম্পর্কের সূত্র ধরে আমার ছেলেকে মালায়েশিয়া পাঠানোর জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা দেই। তারপরে টাকা চাইলে ১৪/১২/২০১১ তারিখে ইউসিবি ব্যংকের মাধ্যমে দুই লক্ষ টাকা ও পরে ১৯/০২/২০১২ তারিখে ৩০ হাজার টাকা সহ মোট ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দেই।তবে সে আজ অবধি আমার ছেলে কে বিদেশে পাঠান নাই ও টাকা ফেরত দেয়নি। অনেক ঘুরাঘুরি শালিস দরবার করেও কোন লাভ হয়নি।

ঝিনাইদহ সদও উপজেলার ব্যপারী পাড়ার আবুল হোসেন সড়কে বসবাস রত আব্দুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিগত ৮ বছর পূর্বে টিটো আমাকে ইরাকে পাঠানোর কথা বলে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা নেই পরের কিস্তিতে ইউসিবি ব্যাংকের ম্যধামে ১ লক্ষ টাকা সহ মোট ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেই। সে আজ অবধি আমাকে ইরাকে পাঠাননি এবং পাওয়া টাকা ফেরত দেয়নি।

পরে টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন ভাবে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। জারগ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানায় যে টিটো বিদেশে পাঠানোর নাম করে তার নিকট থেকে ৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।ভুক্তভোগী অনেকেই বিভিন্ন দপ্তরে বিচার চেয়ে না পেয়ে গত ২৩ শে জুলাই রোজ বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ থানায় মানব পাচার কারি শাহিনুর রহমান টিটোর নামে কয়েকজন অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ ব্যপারে আদম ব্যবসায়ি শাহিনুর রহমান টিটোর মোবাইল ০১৭৪৯-৬৯৪৯৭৭ নম্বরে ফোন করলে সে বিদেশে লোক পাঠানোর বিষয় অস্বীকার করে বলে যে আমি এই সকল বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি এখন ঘুমায়ে আছি পরে আপনার সাথে স্বাক্ষাতে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন।

ঝিনাইদহ সদর থানার অভিযোগের তদন্তকারি কর্মকর্তা এস আই মোঃ আব্দুল হক টিটোর বিরুদ্ধে ৫ টি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, শাহিনুর রহমান টিটো একজন উচ্চ মাপের আদম ব্যবসায়ি। আমার আপন চাচাত ভাই কে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছে কিন্তু এখন দিচ্ছে না। ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের নিকট এই ধরনের অভিযোগ আসলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি।