ভারতের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান শিল্পমন্ত্রীর

ঢাকা, ২৭ অগ্রহায়ণ (১২ ডিসেম্বর): বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বর্তমানে ভারতের অনুকূলে রয়েছে। এ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ভারতের বিশেষ করে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্পখাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য ভারতের উত্তর- পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পুনঃরপ্তানির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে এনে বন্ধুপ্রতীম উভয় রাষ্ট্রই লাভবান হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। শিল্পমন্ত্রী গতকাল পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় অনুষ্ঠিত দু’দিন ব্যাপী ‘বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
বিশ্ব বাংলা সম্মেলন কেন্দ্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ সম্মেলনের আয়োজন করে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী প্রধান অতিথি হিসেবে এর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ, শিল্প, বাণিজ্য ও এমএসএমই বিষয়ক মন্ত্রী ড. অমিত মিত্রসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বক্তব্য রাখেন। শিল্পমন্ত্রী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা হাইটেক প্রযুক্তি ও সৃজনশীল উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সফটওয়্যার শিল্পখাত থেকে ২০১৮- ১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। এখাতে ২০২১ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান। শিল্পমন্ত্রী বলেন, ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মেলন্ধনের ফলে ভারত ও বাংলাদেশের ক্রেতাগোষ্ঠির চাহিদা প্রায় অভিন্ন। এজন্য বাংলাদেশ সবসময় দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। দু’দেশেরই বিশাল ভোক্তাগোষ্ঠি থাকায় শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে পারস্পরিক লেনদেন বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত সমৃদ্ধি অর্জনে একে অপরকে সহায়তা করতে পারে। তিনি ভারতকে বাংলাদেশের অন্যতম কৌশলগত অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বাণিজ্য বৃদ্ধিতে দু’দেশের পণ্য ও শিল্পায়নে বৈচিত্র্য আনার পরামর্শ দেন।
নূরুল মজিদ আরো বলেন, বর্তমান সরকার উদার শিল্প ও বিনিয়োগনীতি গ্রহণ করেছে। এ নীতির আলোকে বিদেশি উদ্যোক্তাদেরকে আকর্ষণীয় প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের জ্বালানি, খনিজ সম্পদ, আইসিটি, হেলথ কেয়ার, ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, উচ্চশিক্ষা, অটোমোবাইলসহ উদীয়মান শিল্পখাতে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। উল্লেখ্য, সম্মেলনে বিশ্বের ৩৬টি দেশ থেকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, উচ্চপর্যায়ের কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব, ঊর্ধ্বতন কূটনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্প উদ্যোক্তা, প্রযুক্তিবিদসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া, বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের আওতাভুক্ত দেশগুলো থেকে ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এতে যোগ দিয়েছেন।