প্রধান মেনু

ভাঙ্গছে কপোতাক্ষ কাঁদছে মানুষ ঃ ব্লক স্থাপন নয় লুব কাটিং চায় ক্ষতিগ্রস্থরা

এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ, পাইকগাছা (খুলনা)॥ অবশেষে অব্যাহত কপোতাক্ষের ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বালুর বস্তা দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। তারপরও থেমে নেই কপোতাক্ষ পাড় সংলগ্ন হাবিবনগর এলাকার নদী ভাঙ্গন। একদিকে ভাঙ্গছে কপোতাক্ষ আর কাঁদছে শত শত ভিটা বাড়ী হারানো অসহায় পরিবার। তাদের দাবী আমরা সাহায্য চায়না বালুর বস্তা বা ব্লক স্থাপন নয় লুব কাটিং চায় ক্ষতিগ্রস্থরা। সর্বগ্রাসী কপোতাক্ষ নদের আগ্রাসনে দিশেহারা এ অঞ্চলের মানুষ। বসত ভিটা নয়, শেষ ঠিকানার (কবর) জায়গাটুকুও কিনেছে অন্য অঞ্চলে। জোঁয়ার-ভাটার নির্মম রসিকতায় প্রতি ঘন্টায় বদলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের মানচিত্র। ভাঙ্গছে নদী, পুড়ছে কপাল। অভাবেব দাবানলে ক্ষুধার্ত শিশুর আহাকার আর বাস্তহারা হওয়ার যন্ত্রনায় কাতর ভাঙ্গন কূলের মানুষ। শত দুঃখ-কষ্টের মাঝেও তাদের চোখে মুখে আত্ম প্রত্যায়ের ছাপ। জানাযায়, ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ মোঃ নূরুল হক, পানি সম্পদ মন্ত্রী বরাবর এক ডিও লেটারের মাধ্যমে একই দাবি জানিয়েছেন।

তিনি গত ১৪ আগস্ট ডিও নং- বাজাসস/১০৪/খুলনা- ৬/২০১৮-১০৫৬ স্মারকে উল্লেখ করেন, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সভ্যতার প্রাচীনত্বের সাথে কপোতাক্ষ গভীর ভাবে যুক্ত। বর্তমান সরকার কপোতাক্ষের অপমৃত্যু ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে খনন কাজ পরিচালনা করছে। ইতিপূর্বে কপোতাক্ষের কপিলমুনি থেকে বালিয়া অংশের খনন কাজ শেষ হয়েছে। বালিয়া থেকে নিন্মগামী অংশের তীব্র ¯্রােতের কারনে পাইকগাছা উপজেলার আগড়ঘাটা, রামনাথপুর, দরগাহমহল, হাবিবনগরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার শত শত পরিবার ভিটা মাটি ছাড়া। ভাঙ্গন রোধ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে ব্লক স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। স্থানীয় সংসদ তিনি তার ডিও লেটারে আরো উল্লেখ্য করেন, নদী পাড়ের মানুষ আমরা, নদীর গতিপথ ও জোয়ার-ভাটার সাথে আজন্ম পরিচয়।

এ অঞ্চলের ভাঙ্গন রোধে ব্লক স্থাপনের যে প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে তা কোন ভাবেই বাস্তব সম্মত নয়। ইতিপূর্বে কয়েকবার ব্লক স্থাপন করে সরকারি টাকা অপচয় হয়েছে। তিনি মামুদকাটির পূর্বভাগ থেকে সিলেমানপুর পর্যন্ত কপোতাক্ষের পুরানো প্রবাহ বরাবর লুব কাটিংয়ের দাবি জানান। সরেজমিনে ভাঙ্গন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কপোতাক্ষের অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙ্গনে শুধু বাপ-দাদার ভিটা মাটিই নয়, ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, কবর স্থান সহ হাজার হাজার ফলজ ও বনজ বৃক্ষ। পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ও হরিঢালী ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার হয়েছে গৃহহীন। পাঁচ হাজারের অধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এই ভয়াবহ ভাঙ্গনে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সাথে আলাপ করে জানযায়, প্রায় দু’যুগ ধরে প্রতিনিয়ত ভাঙ্গছে নদী, গৃহহীনদের তালিকা হচ্ছে দীর্ঘ।

ইতোমধ্যে অনেকে বাস্তভিটা ছেড়ে হয়েছে উদ্বাস্ত। সব হারিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিয়েছে কেউ কেউ। দরগাহমহলের মেহেরুন্নেছার (৬৫) অভিযোগের সাথে উঠে আসে বেঁচে থাকার আত্মবিশ্বাসে সাহসী পদক্ষেপের কথা, পাঁচবার বাড়ি ভেঙ্গেছে তার। স্থানীয়দের অনেকের অভিযোগ, নদী শাসন, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং নদীর মূল স্রোতধারা পরিবর্তন হওয়ার কারনে ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, খননের মাধ্যমে কপোতাক্ষকে তার মূল ঠিকানায় ফেরাতে হবে। জানাগেছে, দরগাহমহল প্রাক্তন ইউপি সদস্য জব্বার সরদার, মাওঃ মোঃ সাইফুল, হাজী শেখ আবু বক্কার, শেখ আব্দুল রাজ্জাক, মান্দার সরদার, শেখ আব্দুল মান্নান, মধু মন্ডল, সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ সহ অনেকেই তাদের বসত ভিটা হারিয়েছেন নদীর ভাঙ্গনে।

বাবা-মার কবর হারাবার শঙ্কায় আছে প্রাক্তন ইউপি সদস্য শেখ সাদেকুজ্জামান। হুমকীর মুখে পড়েছে পাইকগাছা-কয়রা পল্লী বিদ্যুতের মেইন লাইন, খুলনা পাইকগাছা সড়ক (দ্বিতীয় দফায়), এতিম খানা সহ মানচিত্রে কোন রকম স্মৃতি আকড়ে পড়ে থাকা দরগাহমহল ও রামনাথপুর গ্রাম। যাদের অনেকেই বাপ-দাদার ভিটা হারিয়ে অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে আশ্রয় নিয়েছে ফেলে যাওয়া ভিটায়, রাস্তার ধারে কিংবা ভাঙ্গন কুলের খুপড়িতে। তেমনি একজন মুক্তিযোদ্ধা কার্ত্তিক চন্দ্র বিশ্বাস (৮২)। বঙ্গবন্ধুর হাতে হাত দেয়া কার্ত্তিক চন্দ্র নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে ঠাঁই হয়েছে নদী পাড়ে জরাজীর্ন খুপড়িতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাস্তভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও তাদের ওপারে জেগে ওঠা চরে নেই আশ্রয়। স্থানীয় এক প্রভাবশালীর রক্ত চক্ষুতে সেখানেও ঠাঁয় নেই মুক্তিযোদ্ধা কার্ত্তিক কিংবা ভাঙ্গনে ভিটা মাটি হারানো ভুক্তভোগীদের। এলাকাবাসীর দাবি, চলমান সমস্যা সমাধানে যেন মূল ম্যাপ অনুযায়ী কপোতাক্ষ খনন করা হয়। তাহলে গৃহহীন পরিবারের মাথা গোজার ঠাঁইটিও হবে নিজ ঠিকানায়। কপোতাক্ষ ফিরে পাবে তার চিরচেনা গতিপথ।