বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর ও রাষ্ট্রপতির বাণী

প্রধানমন্ত্রীর বাণী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ জুলাই ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০১৯’ উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “জাতিসংঘের আহ্বানে প্রতিবছর ১৫ জুলাই পালিত হয় বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস। বাংলাদেশ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে। এবারও বাংলাদেশ দিবসটি পালন করতে যাচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মহীন যুব সমাজকে জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানই এই দিবসের চেতনা আর এ বিষয়টিই এখন আমাদের অগ্রাধিকার। ২০৪১ সালে উন্নত দেশের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়ার অভিযাত্রায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন একটি রোল মডেল এবং এই যাত্রায় এখনও অনেক দূর যেতে হবে।
যে রূপকল্প এখন আমাদের উন্নয়নের যাত্রাপথের নির্দেশক তা হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে টেকসই মধ্যম আয়ের পর্যায়ে উন্নীত করা, ২০৩০ এর মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা। টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট অর্জনে বিশ্ব সমাজের রয়েছে এক বিশাল এজেন্ডা। এই এজেন্ডায় রয়েছে একটি সমন্বিত উন্নয়ন পথ নির্দেশ। যাতে রয়েছে সকল রূপের দারিদ্র্য বিমোচন, দেশে ও দেশের অভ্যন্তরে অসমতা দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সকল নারী পুরুষের জন্য যথোপযুক্ত কর্মসংস্থান ও পূর্ণ লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং সামাজিক সম্পৃক্তি। এ সকল লক্ষ্য একটি অপরটির ওপর নির্ভরশীল। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ সকল লক্ষ্য কিভাবে অর্জিত হবে।
জাতিসংঘের মতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ হচ্ছে অভীষ্ট অর্জনের মূল কার্যক্রম, আর তাই ২০৩০ এজেন্ডা কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। সুতরাং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের আলোচনায় তরুণদের কাছে দক্ষতা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বার্তা পৌঁছায়। এ সকল উদ্যোগের পাশাপাশি দক্ষতার ক্ষেত্রে অভিন্নমান সম্পন্ন সনদ প্রবর্তন ও সনদেও পারস্পরিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষ জনগোষ্ঠীকে দেশে ও বহিঃবিশ্বের বাজারে গ্রহণযোগ্য করার উদ্যোগ হিসেবে গঠন করা হয়েছে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এই কর্তৃপক্ষ দক্ষতা প্রশিক্ষণকে সমন্বয়, সহজতর, মান নিশ্চয়তা ও পরিবীক্ষণ করবে এবং জাতীয় পর্যায়ের সনদ প্রদান করবে।
৪র্থ শিল্পবিপ্লবসহ অন্যান্য পরিবর্তনের নিরিখে দক্ষতার চাহিদা নিরুপণ, তার ভিত্তিতে কারিকুলাম ও পেশাগত মান তৈরি এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দেশের শিল্পদক্ষতা পরিষদসমূহ ও শিল্প সংঘগুলোতে দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ওয়ার্ল্ড স্কিল ইন্টারন্যাশনাল এবং ওয়ার্ল্ড স্কিল এশিয়ার সদস্যপদ লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক দক্ষতা প্রতিযোগিতাসমূহে বাংলাদেশের দক্ষ তরুণরা অংশ নিচ্ছে। এ বছর বাংলাদেশ রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড স্কিল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দক্ষতার ক্ষেত্রে সক্ষমতার স্বাক্ষর রাখতে যাচ্ছে। এ রকম একটি প্রেক্ষাপটে এই দিবসটি উদযাপন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আমি দিবসের সর্বময় সাফল্য কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী.
রাষ্ট্রপতির বাণী: রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ১৫ জুলাই ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০১৯’ উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও ১৫ জুলাই ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০১৯’ পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। যুব সমাজকে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনে সফলতা অর্জনে উৎসাহিত করতে বিশ্বজনীন এ প্রয়াস সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। উন্নয়নকে গতিশীল করার পূর্বশর্ত দক্ষ জনশক্তি।
দক্ষতা অর্জনকে সরকার একটি অগ্রাধিকার কার্যক্রম হিসাবে গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)। দক্ষতা ও প্রশিক্ষণকে সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার জন্য এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমকে সমন্বিতভাবে পরিচালিত করা, মান উন্নয়ন ও মান তদারকি করার জন্য রেগুলেটরি অথরিটি হিসেবে নবগঠিত এনএসডিএ এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি যুবসমাজের সার্বিক দক্ষতা উন্নয়নে সরকার সাধারণ শিক্ষাক্ষেত্রেও কারিগরি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। জেলা শহর থেকে সকল স্তরে সম্প্রসারিত হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা অবকাঠামো।
কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে এ সকল কার্যক্রম দেশের উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ওয়ার্ল্ড স্কিল ইন্টারন্যাশনাল এবং ওয়ার্ল্ড স্কিল এশিয়ার সদস্য পদ লাভ করেছে যা দেশে ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০১৯’ উদযাপনে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজ দেশ ও দেশের বাইরে কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে – এ প্রত্যাশা করি। আমি ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০১৯’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করি। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”