বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

ঢাকা, ২৩ ভাদ্র (৭ সেপ্টেম্বর) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস-২০২১’ উপলক্ষ্যে ফিজিওথেরাপি বিভাগ, সিআরপি বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
সমগ্র বিশ্বের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি প্রদান এবং এই পেশার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ফিজিওথেরাপি’- এর উদ্যোগে ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিবছর ৮ই সেপ্টেম্বর এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘লং কোভিড এবং পুনর্বাসন’ যা অত্যন্ত যুগোপযোগী হয়েছে এবং করোনা পরবর্তী জটিলতা নিরসনে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই স্বাধীনতার অব্যবহিত পর বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জাতির পিতার নির্দেশে ডাঃ আর. জে. গার্স্ট এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে তৎকালীন মুক্তিবাহিনী হাসপাতাল বর্তমানে National Institute of Traumatology & Orthopaedic Rehabilitation (NITOR) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে পুনর্বাসন সেবার সূচনা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যের নাগরিক ভ্যালরি অ্যান টেইলর বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গুদাম ঘরে সিআরপি’র প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সিআরপি পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসা, শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনসেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী গত সাড়ে ১২ বছরে আমরা স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। ফলে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোড়গোরায় পোঁছে দেয়ার লক্ষ্যে পুনরায় আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করি।
এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করেছি। যেখানে বিনামূল্যে ৩০ প্রকার ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। আমরা ‘জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি-২০১১’ প্রণয়ন করেছি, ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা’ অর্জনকে অগ্রাধিকার দিয়ে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছি।
আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ১০৩টি প্রতিবন্ধীসেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং ৩২টি মোবাইল থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রান্তিক মানুষকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৫,৮২,৯০৭ জনকে ফিজিওথেরাপি সেবা পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমরা অটিজম রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে ১৯,২২৪ জন অটিজম সমস্যাগ্রস্ত শিশু ও ব্যক্তিকে বিনামূল্যে ম্যানুয়াল এবং ইনস্টুমেন্টাল থেরাপি সার্ভিসসহ কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করেছি।
আমাদের সরকার দক্ষতার সাথে চলমান করোনা মহামারি মোকাবিলা করে চলেছে। করোনা পরবর্তী এবং লং কোভিডের বিভিন্ন জটিলতা নিরসনে সিআরপি’র ফিজিওথেরাপি বিভাগ অসামান্য ভূমিকা পালন করে আসছে। লং কোভিড এর সমস্যাসমূহ নিরসনে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শাখায় ‘লং কোভিড পুনর্বাসন সেবা চালু করেছে এবং সিআরপি’র ৯টি শাখার মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৮০ হাজার রোগীকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী এবং প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা সকল ব্যক্তিকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তির জন্য তাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত, জীবনমান উন্নয়ন এবং আত্মনির্ভরশীল করতে একযোগে কাজ করতে সকলের প্রতি আমি আহ্বান জানাই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”