প্রধান মেনু

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে রাষ্ট্রপতির ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ২০ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন: “পরিবেশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৯’ পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।

বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘Air Pollution’ যা অত্যন্ত যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি। মানুষের জীবনের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সারাবিশ্বে বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ, দ্রুত নগরায়ণ, মাটি, পানি ও বায়ুদূষণের কারণে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। বায়ুম-লে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার বৈশ্বিক উষ্ণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে যা জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে।

অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, ইটভাটা, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার ফলে বাংলাদেশেও বায়ুদূষণের হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। সমৃদ্ধ সুস্থ জাতি গঠনে তাই পরিবেশের ভারসাম্য নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ইটভাটা বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হওয়ায় সরকার ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৯’ জারি এবং কার্যকর করেছে। ইতোমধ্যে দেশে বিদ্যমান প্রায় ৭২ শতাংশ ইটভাটাকে পরিবেশসম্মত এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নত প্রযুক্তির হাইব্রিড হফম্যান, টানেল বা আধুনিক জিগ জ্যাগ প্রযুক্তির ইটভাটায় রূপান্তর করা হয়েছে। একই সাথে শিল্প প্রতিষ্ঠানে বায়ুদূষণ রোধে এয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সবুজ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে সরকার শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে কৃষি, শিল্পসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে উন্নয়নকে টেকসই করতে সকল পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

আমি ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৯’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করি। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

                                                                                     ও

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ^ পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। বিশ^ পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এ বছরের প্রতিপাদ্য    ‘ Air Pollution’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়েছে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রকৃতি ও পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের অপরিনামদর্শী কর্মকান্ডের কারণে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশে^র উন্নয়নশীল অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও বায়ুদূষণজনিত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সনাতন পদ্ধতিতে ইট পোড়ানো, যানবাহনের ধোঁয়া, অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ এবং দূষণরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বায়ু দূষিত হচ্ছে।

বায়ুদূষণের ফলে অনেকেই শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন এবং মৃত্যুবরণ করছেন। জাতিসংঘের তথ্যমতে বায়ুদূষণের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে; এর মধ্যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বায়ুদূষণজনিত রোগ প্রতিকারে প্রতি বছর স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে।

বায়ুদূষণ সঙ্কট মোকাবেলায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। আমাদের সরকার বায়ুদূষণের মাত্রা সার্বক্ষণিক পরিবীক্ষণের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, রংপুর ও কুমিল্লা শহরে মোট ১৬টি সার্বক্ষণিক বায়ুমান পরিবীক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে।

এছাড়াও দেশের বড়শহরগুলোতে আরো ১৫টি স্থানান্তরযোগ্য বায়ুমান পরিবীক্ষণযন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। ক্লিন এয়ার অ্যাক্টের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। যানবাহনের দূষণ হ্রাসে ডিজেলে সালফারের মাত্রা কমিয়ে আনা হয়েছে। ঢাকা শহরে যানবাহনের চাপ ও দূষণ কমানোর লক্ষ্যে মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট চালু হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রুটে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। গৃহের অভ্যন্তরে বায়ুদূষণরোধে প্রায় ৩০ লাখ উন্নত চুলা বিতরণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে প্রায় ৫৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

আমাদের সরকার প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (ঝউএ) অর্জনে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নে আমরা বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে যাতে প্রতিবেশ ও পরিবেশসম্মত বিধিব্যবস্থা প্রতিপালিত হয় সে দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আমি আশা করি, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্ধসঢ়;যাপনের মধ্য দিয়ে পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণে বিশ্বসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাই।

আমি ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”