বিশ্ব খাদ্য দিবসে রাষ্ট্রপতির বাণী

ঢাকা, ৩০ আশ্বিন (১৫ অক্টোবর) : রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২০’ উদ্যাপনের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। এ উপলক্ষ্যে মানুষের মৌলিক চাহিদার প্রধানতম অনুষঙ্গ খাদ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত সকল পর্যায়ের উৎপাদক, সরবরাহকারী, বিপননকারীসহ সংশ্লিষ্টদের জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আবহমানকাল থেকেই কৃষি আমাদের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কৃষি জনগণের খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা প্রদান ছাড়াও কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের কাঁচামাল সরবরাহ করে। সামগ্রিক অর্থে দারিদ্র্যহ্রাসকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম।সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ উপলব্ধি থেকেই মহান স্বাধীনতা লাভের পর পরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
জাতির পিতার প্রদর্শিত পথেই বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবে কৃষি উন্নয়নে বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে কৃষিতে দৃষ্টান্তমূলক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ফসলের পাশাপাশি প্রাণিজ আমিষখাতেও ব্যপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে।এ বছর একটি ভিন্ন রকম পরিস্থিতিতে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’ উদ্যাপিত হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সবাইকে নিয়ে একসাথে বিকশিত হোন, শরীরের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন।
আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ’-যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত যৌক্তিক ও অর্থবহ। কোভিড-১৯ মহামারিতে বিশ্বব্যাপী সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। শুরু থেকেই বর্তমান সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে এই মহামারিতেও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। দুর্যোগকালেও কৃষির সাফল্য এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তবে করোনা-উত্তর বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় আমাদের আরো সচেষ্ট হতে হবে।
আবাদযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জমিতে উন্নত প্রযুক্তি অনুসরণ করে মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন ফসলের আবাদ নিশ্চিত করতে হবে।আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনা জরুরি। জাঙ্কফুড পরিহার করে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণে মৌসুমি ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়ানো জরুরি।মনে রাখতে হবে সুষম খাদ্য গ্রহণের সাথে কায়িক পরিশ্রম আমাদের দেহ-মনকে সুস্থ রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করবে।
আগামীর খাদ্য নিরাপত্তাকে টেকসই করতে লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মীসহ সংশ্লিষ্টরা আরও মনোনিবেশ করবেন-এ বিশ্বাস আমার রয়েছে। শুধু সরকারি পর্যায়েই নয় বেসরকারি পর্যায়েও অধিক বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। গ্রামপ্রধান বাংলাদেশে আমাদের নজর দিতে হবে গ্রামে।
একইসাথে কৃষকরা যাতে উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হোক-এ প্রত্যাশা করি। আমি বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২০ উদ্যাপনের সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
জয় বাংলা। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”