প্রধান মেনু

বিলুপ্তির পথে গফরগাঁওয়ের লাফা বেগুন

শফিউর রহমান সেলিম,গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : বিস্ময় আর চমকভরা দৃষ্টি নিয়ে সব মানুষই একবার তাকাতো বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লাফা বেগুন নামে পরিচিত গফরগাঁওয়ের গোল বেগুনের দিকে। যারা গফরগাঁও রেল স্টেশন হয়ে ট্রেনে যেতেন, তাদের কাছে অনেক ফেরিওয়ালাই বেগুনের চমক নিয়ে হাঁক ছাড়তো “গোল বেগুন নিবেন”।

এখন নানা সমস্যার কারণে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে এ লাফা বেগুন। গোল বেগুন কেবল গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের চরমছলন্দ গ্রামের কাচারী পাড়া এলাকায়ই হতো। এলাকার মাত্র ৫০/৬০ জন চাষি এ ফসল ফলাতেন।

আলাপ হলো বেগুন চাষি জীবন, তমিজউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে। তারা জানালেন, মূল লাফা বেগুন যারা চাষ করতেন তাদের অনেকেই এখন জীবিত নেই। তাছাড়া নদীগর্ভে অনেক জমি বিলীন হয়ে গেছে। এর পরেও কিছু জমিতে বেগুন চাষ করা হতো, কিন্তু বীজ নেই। এ বেগুনের বীজ কোথাও না পাওয়ায় কৃষকরা নিরুপায় হয়ে এর চাষ বাদ দিয়ে সাধারণ বেগুন করছেন।

লাফা বেগুনের জন্মস্থান চরমছলন্দ কাচারী পাড়ায়। স্বল্প জমিতে দুই একজন চাষি বংশানুক্রমিক ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য লাফা বেগুনের চাষ করছেন মাত্র। নির্দিষ্ট জমি ছাড়া শত চেষ্টা করেও অন্য এলাকার জমিতে এ বেগুন ফলানো আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এর ফলন খুব অল্প সময়ে সম্পন্ন হয়। এ বেগুনের ওজন দুই থেকে তিন কেজি পর্যন্ত হতো।

বেগুন চাষিদের মতে, এর চাষাবাদে কঠোর শ্রম দিতে হতো। ভরা শীতে চলে এ বেগুনের চাষ। রাতের শেষ প্রহরে মাটি পা দিয়ে প্রতিদিন উলট পালট করে দিতে হতো। অল্প সেচ দিতে হতো প্রতি সপ্তাহে। কারণ বেগুন গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে রস শুষে নেয়। এরপর কিছু আচার অনুষ্ঠান করা হতো যা শিক্ষিত আধুনিক মানুষের কাছে হাস্যকর। বেগুন চাষিরাও নানাজনের নানা কথা শুনে বিব্রত হতেন। ব্যাপারটা কুসংস্কারও বটে।

দেখতে সুন্দর অত্যন্ত সুস্বাদু লাফা বেগুন ভাজার স্বাদ সত্যিই ভুলবার নয়। এ বেগুনের আকৃতি গোল, তবে উপরে মসৃণ নয়। অনেকটা ঢেউ খেলানো খাঁজ কাটা। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী বর্তমানে জামালপুর, ইসলামপুরের বড় বড় বেগুনকে গফরগাঁওয়ের গোল বেগুন হিসেবে বিক্রি করছে।