প্রধান মেনু

বিদেশে স্বাস্থ্যকর্মী প্রেরণের পথ সুগম করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে বৈঠক করলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী

জেনেভা (সু্ইজারল্যান্ড), ২০ জুন: দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যকর্মী প্রেরণের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেল্থ ওয়ার্কফোর্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক জিম ক্যাম্পবেলের সাথে গত ১৮ জুন জেনেভায় এক বৈঠকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় বিদেশে স্বাস্থ্যকর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করে উন্নত দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশ অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়।

পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব রয়েছে। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে তারা স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ধরনের নিয়োগের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেন স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট না হয়, সে বিষয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুনির্দিষ্ট কোড অব প্রাকটিস রয়েছে। এর আওতায় নিয়োগকারী দেশসমূহের জন্য স্বাস্থ্যকর্মী প্রেরণকারী দেশসমূহের স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য-খাতের মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য উন্নতর প্রশিক্ষণ ও বৃত্তির ব্যবস্থা করা প্রভৃতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মী নিতে ইচ্ছুক দেশসমূহের সাথে দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে ড. জিম ক্যাম্পবেল বাংলাদেশেকে সহযোগিতা করবেন বলে জানান। এছাড়া, প্রবাসী স্বাস্থ্যকর্মীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠাকরণ, নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণ প্রভৃতি সম্পর্কিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে তিনি বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে বাংলাদেশের নেতৃত্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে আঞ্চলিক ডায়ালগ শুরু হতে পারে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।

এছাড়া, এ সফরে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী গত ১৯ জুন ফ্রান্সের অ্যানেসীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার Global Task Force on Cholera Control (GTFCC) এর ১১তম সভায় Keynote Speaker হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। এ সভায় তিনি কলেরা রোগ নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ অগ্রযাত্রা এবং সাফল্যসমূহ তুলে ধরেন। প্রাইমারি হেল্থ কেয়ার কম্যুনিটি ক্লিনিক, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, জনসচেতনতামূলত প্রচারণা অভিযান প্রভৃতি কলেরার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি তার বক্তব্যে উপস্থাপন করেন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবসমূহের কারণে বাংলাদেশ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং এর ফলে স্বাস্থ্য খাতে অর্জিত সাফল্যসমূহ অব্যাহত রাখা কষ্টকর হবে বলে তিনি জানান। GTFCC এর সহযোগিতায় প্রণীত জাতীয় কলেরা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ২০১৯-২০৩০ এর ওপর আলোকপাতকালে তিনি বলেন, কলেরা নির্মূল করার জন্য নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় সরকার এসব সম্পর্কিত অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের বিষয়ে জোর দিচ্ছে। GTFCC এর সভায় বিশ্বের কলেরা ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল এবং দেশসমূহের জন্য নিম্নোক্ত চারটি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সাহায্য ও সহযোগিতা এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।

প্রথমত: কলেরা নিয়ন্ত্রণে মৌলিক চালিকাশক্তি হিসেবে নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি অবকাঠামো নির্মাণ; দ্বিতীয়ত: ওরাল কলেরা ভ্যাকসিন তৈরিতে বাংলাদেশ এবং আফ্রিকার দেশসমূহে সাহায্য প্রদান; তৃতীয়ত: কলেরার প্রার্দুভাব দ্রুত সনাক্তকরণ এবং তা নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং চতুর্থত: কোথাও কলেরার প্রাদুর্ভাব হলে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানাতে রাষ্ট্রসমূহকে উদ্বুদ্ধকরণে ‘বাণিজ্য ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা’-এর পরিবর্তে বৈশ্বিক সংহতি ও সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি করা।

পরিশেষে, কলেরা নিয়ন্ত্রণে চলমান উদ্যোগকে আরো বেগবান করার জন্য আগামী আগস্ট মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য সভায় অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত সবাইকে আহ্বান জানান।