প্রধান মেনু

বাঘার পদ্মার চরে সবজি চাষে কৃষকদের মাথায় হাত

আখতার রহমান,রাজশাহী: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সবজি ভান্ডার নামে পরিচিত সীমান্তবর্তী পদ্মার চরাঞ্চল। প্রতি বছর বর্ষা শেষে শীত মৌসুমে পদ্মা নদীর পলিমাটি বিধৌত চরাঞ্চল জুড়ে লক্ষ্য করা যায় হরেক রকম সবজি চাষ। গত বছরের তুলনায় এবারও যার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ অঞ্চলের কৃষকরা বানিজ্যিক ভাবে নানা প্রকার সবজি চাষাবাদ করে বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা পুরনের পাশা-পাশি তা রপ্তানী করছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, বাঘা উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন ও ২ টি পৌরসভার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমান সবজি চাষাবাদ হয় পদ্মা বিধৌত সীমান্তবর্তী এলাকা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে। যার ব্যতিক্রম ঘটেনি এবছরেও । পদ্মার চরাঞ্চল ও পাশ^বর্তী এলাকার কৃষকরা তাদের অভাব মেটাতে প্রতিবছর শীত মৌসুমে বানিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি
আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ফলে এ অঞ্চলকে সবজি ভান্ডার হিসাবে আখ্যা দেয়া হয়।

চরাঞ্চলে শবজি চাষ করে ইতোমধ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা বাজারজাত করছেন মুলা. বেগুনসহ নানা শীত মৌসুমের সবজি। অনেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তবে এবছর লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না কৃষকেরা। কারণ বর্তমান মুলার দাম ছিল ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি। গত বছর শীত মৌসুমে যে পিয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকা তা এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৪ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে। অনুরুপ বেগুন পাওয়া যাচ্ছে ৬ থেকে ৭ টাকার মধ্যে। অথচ গত বছর শীত মৌসুমে বেগুন বিক্রয় হয়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি। আমাদের প্রতিনিধি সরেজমিন উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চল সহ সমতল এলাকার বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শনে গেলে, এ অঞ্চলের সবজি চাষিরা তাদের লোকসানের কথা তুলে ধরেন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষপটে সার বীজ এবং কীটনাশক পেতে আমাদের কোন সমস্যা নেই।

এ কারনে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশী শীতকালীন শাক-সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বাজার দর কম হওয়ার কারনে আমরা কৃষকেরা চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। এখানে যে সমস্ত সবজি উৎপাদিত হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে-ফুল কপি,বাঁধা কপি, মুলা, পালং ,আলু ,বেগুন, লাউ, সিম , টমেটো, পিঁয়াজ ইত্যাদি। এ সমস্ত সবজি একদিকে যেমন অত্র এলাকার মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে অপর দিকে প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি করে চালান দেয়া হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

পদ্মার চরাঞ্চলের লাউ চাষী গোলাম বিকরিয়া জানান, তিনি দুই একর জমিতে লাউ চাষ করেছেন। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তিনি ১৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। পিয়াজ চাষী সাইফুল ইসলাম বলেন আমার ২ বিঘা জমিতে পিঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা কিন্তু বর্তমান জাারদরে বিক্রয় করিলে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা পাবো। কৃষক আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন সবজি বিক্রয় শেষ হলে জমিতে চাল কুমড়া ও ঝিঙার আবাদ করবেন।

তবে সমতল এলাকা পাকুড়িয়া গ্রামের আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি এ বছর ১ একর জমিতে আগাম ফুল কফি ও বাঁধা কফি আবাদ করেছেন। বর্তমানে তিনি হাটে-বাজারে প্রতিদিনই তা বিক্রয় করেছেন। তার এই আবাদ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন আগামি দুই-তিন মাস কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকার কফি বিক্রয় করবেন। একই ভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, আমোদপুর এলাকার কৃষক মহাসিন আলী ও মাসুদ রানা। তাদের মতে, এ বছর আবহাওয়া অনুকুল থাকায় সকল প্রকার সবজিতে বাম্পার ফলন হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বাঘা উপজেলার সব অঞ্চলেই সবজির চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে। সেখানকার কৃষকরা বানিজ্যিক ভাবে সবজি চাষ করে ঢাকায় রপ্তানী করছে। তাঁর মতে অত্র উপজেলায় এ বছর প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ হচ্ছে।