প্রধান মেনু

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব-এঁর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা সভা

ঢাকা, ২৪ শ্রাবণ (৮ আগস্ট): বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব-এঁর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গমাতাকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে বঙ্গমাতার অবদান রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত জন্মভূমিকে শস্য-শ্যামলারূপে গড়ে তুলতে জাতির পিতার পাশে দাঁড়ান বঙ্গমাতা।’  তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীই নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী, রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে আজীবন প্রিয়তম বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী ছিলেন।

দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গমাতার সারা জীবনের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা আড়ালে থেকে তার গার্হস্থ্য জীবনের কর্তব্য পালন আর মন-মস্তিষ্কে স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সহযোগিতা করে গেছেন আজীবন। খোকা থেকে শেখ মুজিব। শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু এবং সবশেষে বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা। এগুলোর পেছনে আজীবন স্বামীকে সাহস জুগিয়েছেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, দিয়েছেন অনুপ্রেরণা ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।’

বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা অবিচ্ছেদ্য সত্তা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ -এক অমর কবিতার নাম। আর সেই মহাকাব্য রচনায় যে নারীর অবদান অনস্বীকায, যিনি সোনার বাংলা বিনির্মাণে আড়ালে অন্তরালে থেকে রেখে গেছেন অসামান্য অবদান, তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ যেমন একই সূত্রে গ্রথিত, তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও পরস্পর অবিচ্ছেদ্য নাম।

রাজনীতিতে বঙ্গমাতার দূরদর্শিতা ও অবদানের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে দীর্ঘকাল তাঁর পাশে থেকে মানবকল্যাণ ও রাজনীতির শিক্ষা লাভ করেছিলেন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। তিনি সংগঠনকে (আওয়ামী লীগ) সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সব সময় তাঁর যোগাযোগ ছিল। নিজের গহনা বিক্রি করে ছাত্রলীগের সম্মেলনে টাকা দিয়েছেন। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তি থেকে আয়কৃত টাকায় তিনি অনেক মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থাও করেছিলেন। এছাড়াও দলীয় কার্যক্রম, আন্দোলন সংগ্রামে নিজের অর্থ-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুর সাথে বঙ্গমাতা এবং তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করে। এমনকি ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেলকেও হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বর্বর ঘটনা বিরল। এটা বাঙালি জাতির জন্য কলঙ্কের। আরো কলঙ্কের বিষয় হলো – হত্যাকারীদের মধ্যে পাঁচজন এখনো বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে। এদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বাংলাদেশের জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপ ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতির পিতার নেপথ্যের শক্তি, সাহস ও বিচক্ষণ পরামর্শক হয়ে নিভৃতে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন শক্তি হয়ে, অনুপ্রেরণা হয়ে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রাম, আন্দোলন ও কারাজীবনে বঙ্গমাতা এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। স্ত্রী হিসেবে তাঁর জীবনকালে কখনো স্বামীকে একনাগাড়ে দুই বছর সাথে পাননি। কিন্তু কোনোদিন কোনো অনুযোগ-অভিযোগ ছিল না, কখনো বলেননি যে তুমি রাজনীতি ছেড়ে দাও। জীবনে কোনো প্রয়োজনে কোনো দিন বিরক্ত হননি। যত কষ্টই হোক কখনো ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি তাঁকে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বঙ্গমাতার বিচক্ষণতা ও সফলতার নানাদিক উল্লেখ করে বলেন, মহীয়সী এই নারী একজন স্বার্থক সহধর্মিনী ও আদর্শ মাতা যেমন ছিলেন, অন্যদিকে তিনি নিজেকে ক্রমেই একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলেন। তাঁর স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল, আন্দোলন চলাকালীন প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় সাক্ষাৎকারের সময় বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা নিয়ে আসতেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ বাঁচিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সেই নির্দেশনা জানাতেন।

শাহরিয়ার আলম বলেন, আজ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নেই, কিন্তু তিনি আছেন চিরভাস্মর হয়ে, আমাদের মননে। তিনি বেঁচে আছেন প্রত্যেক দেশপ্রেমিক বাঙালির হৃদয়ে। এই শ্যামল সবুজ বাংলার আবহমান মায়ের প্রতিচ্ছবি, আমাদের ‘বঙ্গমাতা’। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর প্রেরণাই নন, তিনি সমগ্র বাঙ্গালী জাতির প্রেরণা।

শাহরিয়ার আলম আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বঙ্গমাতার জীবনের জানা-অজানা অধ্যায়গুলো নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে রচিত হবে তাঁর একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনী, যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁর ত্যাগ ও সংগ্রাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদেরকে খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়তে পারে।’

আলোচনা সভার শেষে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টে শাহাদত বরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।