বঙ্গবন্ধু ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ ও রাজনীতিবিদ — মোস্তাফা জব্বার

ঢাকা, ৭ ভাদ্র (২২ আগস্ট) : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবলমাত্র হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিই নন, তিনি
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ ও রাজনীতিবিদ। শেখ মুজিব ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত দুটি রাষ্ট্রগঠনের বিপরীতে একটি ভাষাভিত্তিক আধুনিক জাতিরাষ্ট্রগঠনের দূরদর্শী স্বপ্ন দেখেন। ভাষাভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রগঠনের ধারণা তখন ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া বা চীনের বাইরে প্রসারিত হয়নি। এ অঞ্চলে ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্রের ধারণা ছিল অকল্পনীয়। বরং পাকিস্তান ও ভারত তৈরি হয় সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে।
৪৭ থেকে ৭১ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু জনগণকে সংগঠিত করে জনগণকে সাথে নিয়ে জনযুদ্ধ করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। মন্ত্রী গতকাল শুক্রবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে লাইব্রেরী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত বিশেষ ওয়েবিনার চিরজাগরূক বঙ্গবন্ধু শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ তথ্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ শীর্ষক মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাবিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর দে। বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির সভাপতি সৈয়দ আলী আকবরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি বেগম আখতার জাহান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো: গোলাম ফারুক, গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুবকর সিদ্দিক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বক্তৃতা করেন।
৭২ এর সংবিধানকে জাতিরাষ্ট্রগঠনের প্রামান্য দলিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ রাষ্ট্র মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সকলের। বঙ্গবন্ধু নবগঠিত বাংলাশের ধ্বংস স্তপের পের দাঁড়িয়েও প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতিয়করণ আইটিইউ, ইডপিইউ এর সদস্যলাভ এবং বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহকেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ দেশগঠনে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে পরবর্তী পাঁচবছরের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে ঘুরে দাঁড়াতো।
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বে সেই বীজ আজ বিশাল মহীরূহে রূপ নিচ্ছে। ২০০৮ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচী বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা কর্মসূচীর রূপরেখা। এরই ধারাবাহিকতায় অতীতের তিনটি শিল্পবিপ্লব মিস করেও ২০২০ সালের বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের ও ডিজিটাইজেশনের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। মহান বিপ্লবী হুচিমিন, মাওসেতুং কিংবা চেকুয়েভারার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের কারো সাথেই বঙ্গবন্ধুর তুলনা করা যায় না।
এদের প্রত্যেকেই কোনো বিশেষপন্থা, বিশেষজনগোষ্ঠী বা বিশেষকৌশল অবলম্বন করেছেন-কিন্তু বঙ্গবন্ধু সমগ্র জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সামগ্রিক জনযুদ্ধ করেছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দৃষ্টিআকর্ষণ করে মন্ত্রী সকলস্তরের শিক্ষাসহ কম্পিউটার ল্যাব, ক্লাশরুম, পাঠক্রম, পাঠদানপদ্ধতি, পরীক্ষা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও ডিজিটাল করার আহ্বান জানান এবং তিনি একই সাথে পাঠাগারগুলোতে ইন্টারনেট সরবরাহের নির্দেশ দেন।
ড. সৌমিত্র শেখর দে মূলপ্রবন্ধে বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্যে থেকেও কলকাতায় শিক্ষাজীবনে কোলকাতায় পূর্ববাংলার মানুষদের বাঙালি জাতীয়তার পক্ষে সংগঠিত করে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে সর্ববিস্তারে নিয়ে গেছেন। আমাদের কবিসাহিত্যিকদের অনেকেই কায়েদ-ই-আযমের ওপর বই ও কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও মানুষগুলোর মাথা থেকে পাকিস্তানের ধারণা মুছে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।