প্রধান মেনু

ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টুর বিরুদ্ধে অনাস্থা

মোঃমাহফুজুর রহমান বিপ্লব, ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ সদর উপজেলার ৫নং ডিক্রীরচর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত নয়টি ওয়ার্ড মেম্বারগণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে দাখিলকৃত একটি অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৯/৩/২০১৮ ইং তারিখ ফরিদপুর সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৫নং ডিক্রীরচর ইউনিয়নে মেহেদী হাসান মিন্টু  চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়। গত ১৬/৪/২০১৮ইং তারিখে গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পরে গত ২১/৪/২০১৮ ইং তারিখ ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সেই মোতাবেক ইউনিয়ন পরিষদের ৯ জন নির্বাচিত মেম্বার হিসেবে তাদের দায়িত্বভার গ্রহণ করে।
এর মধ্যে মোঃ আসাদুজ্জামান খান জলিল ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়। ৮নং ওয়ার্ডে মোঃ আবুল হাসান(মন্টু), ৭নং ওয়ার্ডে মোঃ মোসলেমউদ্দিন প্রামানিক, ৯ ৭নং ওয়ার্ডে মোঃ মিন্টু মিয়া, ৬নং ওয়ার্ডে মোঃ মান্নান মিয়া, ৩নং ওয়ার্ডে মোঃ মান্নান মিয়া, ৪নং ওয়ার্ডে মোঃ জামিল মন্ডল, ৫নং ওয়ার্ডে মোঃ খায়রুজ্জামান ৭,৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনে হাসিনা পারভীন, ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে মনোয়ারা বেগম দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে উক্ত সকল ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যগণ স্ব স্বা দায়িত্ব পালন করতে থাকে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ওয়ার্ডের নির্বাচিত উক্ত সদস্যদেরকে কোন কাজে সম্পৃক্ত না করে দুর্নীীত ও স্বজন প্রীতির আশ্রয় নিয়ে গুরুত্বর অসদাচরণ করতে থাকে।
ইউনিয়নের নির্বাচিত ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে তারা বার বার তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইউনিয়ন পরিষদের আইন নীতিমালা অনুযায়ী পরিষদের সর্বাঙ্গীন কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে সম্পাদন করার লক্ষে সাবধান ও অনুরোধ করা সত্বেও চেয়ারম্যান মিন্টু কারো কথা কর্নপাত না করে অবৈধ ও বেআইনীভাবে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছে। নিম্নে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির দফাওয়ারী অভিযোগ উথাাপিত হলো। ১। দায়িত্বভার গ্রহনের পরপরই সরকারের হতদরিদ্র কর্মসূচির আওতায় ৪০দিনের কাজের লেবারদের যে তালিকা ব্যাংক এবং উপজেলায় দাখিল করা আছে সেই তালিকার কোন শ্রমিক ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেনি। ভূয়া টিমসহি দিয়ে চেয়ারম্যান এবং তার সহযোগিরা এই টাকা উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাত করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গুরুতর অসদাচরণ করেছে।
২। ফরিদপুর শহর রক্ষা বেরীবাঁধ এলাকায় মাটি কেটে বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। যা বিভিন্ন সময় দৈনিক জাতীয় পত্রিকায় এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনাসহ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ৩। ২০১৮-২০১৯ইং সালের এ ডি বি’র কাজ না করে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছে। ৪। এলজিএসপি প্রকল্পের আনুমানিক প্রায় ৯ লক্ষ টাকা তসরূপ করেছে। ৫। পরিষদের সভায় রেজুলেশন না লিখে ভয়ভীতি দেখিয়ে উক্ত রেজুলেশন খাতায় পরিষদের সদস্যদের স্বাক্ষর করিয়েছে। ৬। বর্তমান যে ৪০দিনের কাজ চলছে তাতেও দুনীতি চলছে, লেবার দিয়ে না কাজ করে ভেকু ব্যবহার করছে এবং মনোয়ার মেম্বার তার নিজ বাড়ির রাস্তা নির্মাণ করছে। ৭। ১০টাকা কেজীর দরিদ্রদের জন্য প্রদত্ত সরকারি চাউল দরিদ্রদের না দিয়ে চেয়ারম্যানের আত্মীয় স্বজন ও স্বচ্ছলদের মাঝে বিতরণ  করেছে।
৮। পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদেরকে বিভিন্ন সময চেয়ারম্যান মিন্টু লাঞ্ছিত করেছে ও মানহানীকর উক্তি করেছে। ৯।  ইউনিয়ন পরিষদ আইন-২০০৯ এর ৩৩নং ধারার বিধান মতে সরাসরি ভোটে নির্বাচিতদের মধ্য থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত না করে চেয়ারম্যান তার পছন্দের লোককে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্তি করে সদস্যদের জোর করে স্বাক্ষর প্রদানে বাধ্য করেছে। ১০। ১% এর টাকা কোন প্রকল্পের কাজ না করে সমুদয় অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাত করেছে। প্রসংগত, ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিগ্রীরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টুর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রে জানা যায়, ডিগ্রীরচর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিগত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। নির্বাচনের আগে নানা রকম উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের আবেগকে কাছে লাগিয়ে নিজেই এখন ফায়দা লুটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মাননীয় সাংসদ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের অবদান ফরিদপুর শহর রক্ষা বাঁধ। এই বাঁধ ফরিদপুর শহরকে পদ্মার ভাঙ্গণের হাত থেকে রক্ষা করছে। সেই বাঁধ ঘেঁষে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ও অন্যায়ভাবে চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু নিজের প্রভাব ঘাটিয়ে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নদীর ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষাকারী বাঁধটিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
এছাড়াও ড্রেজার দিয়ে সে অবৈধভাবে নদীর বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছে। যার ফলে পরবর্তী সময়ে বৃষ্টি বা বর্ষার মৌসুমে বাঁধটি ভাঙ্গণের মুখে পড়বে বলে স্থানীয় বসবাসকারীরা মনে করছেন। জনপ্রতিনিধি হওয়ায় মিন্টুর এই অন্যায় আচরনের প্রতিবাদ স্থানীয় মানুষ করতে পাড়ছেনা। অশিক্ষিত অল্প শিক্ষিত মানুষ নদী খনন করে মাটি বিক্রির বিষয়টি তেমন গুরুত্ব না দিলেও গ্রামের গন্যমান্য বয়োজ্যৈষ্ঠ ব্যক্তিরা ঠিকই গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিগ্রীর চর ইউনিয়নবাসি জানালেন, নির্বাচনের আগেও যাকে দেখেছি হিসেব নিকেষ করে চলতে। ইউনিয়নের নির্বাচনেও তার অর্থ ব্যয় করতে হয়নি, কারণ তার সে সামর্থ্যও ছিলনা।
কিন্তু চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরেই মাত্র ১ বছরের মধ্যে খুব দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে তার আর্থিক অবস্থার চিত্র। ৩২ লক্ষ টাকার নোয়া গাড়িতে চড়ছে, ব্যবহার করছে দামিদামি পোষাক। এত অল্প সময়ের মধ্যে অঢেল টাকার মালিক বনে যাওয়ায় তার আয়ের উৎস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে ইউনিয়নবাসি। চেয়ারম্যান মিন্টুর বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্রক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন ডিক্রীরচর ইউনিয়নবাসি।