প্রধান মেনু

প্রধান শিক্ষক নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলেন ইউএনও খালিদ হোসেন পাইকগাছার এসএমএ মাজেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়

এস, এম, আলাউদ্দিন সোহাগ, পাইকগাছা, খুলনা ॥ নিয়োগ মানেই অনিয়ম, নিয়োগ মানেই দুর্নীতি, নিয়োগ মানেই রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, নিয়োগ মানেই মোটা অংকের টাকা উৎকোচ গ্রহণ, নিয়োগ মানেই দেশের বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে প্রচলিত এ ধারণাকে বদলে দিলেন পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। তিনি নিজেই সার্বিক মনিটরিং করার মাধ্যমে উপজেলার এসএমএ মাজেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

ইতোপূর্বে এত স্বচ্ছ নিয়োগ কখনো হয়নি বলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এ ধরণের নিয়োগ অনুকরণীয় হতে পারে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। উল্লেখ্য, উপজেলার এসএমএ মাজেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোতাহার হোসেন ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর পদত্যাগ করলে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি শূন্য হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শূন্য পদে এ পর্যন্ত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ৩ বার নিয়োগ আহ্বান করেন। সর্বশেষ ৩১ জুলাই ২০২০ তারিখে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগ আহ্বান করা হয়। এতে বিভিন্ন এলাকার ১৮ জন শিক্ষক আবেদন করেন।

সোমবার সকাল পৌনে ১১ টায় পাইকগাছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে ১শ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় আবেদনকারীদের মধ্যে ১১জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করে। প্রধান শিক্ষকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগ যাতে কোন ভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয় এ জন্য পূর্ব থেকেই সতর্ক ছিলেন ইউএনও এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। ইউএনও এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল পর্যায়ে সার্বিক মনিটরিং করেন। নিয়োগ স্বচ্ছ করতে ইউএনও খালিদ হোসেন নিজের মেধা এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পন্থা অনুসরণ করেন। পরীক্ষার পদ্ধতি দেখে প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরণের আত্মবিশ্বাস তৈরী হয়।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল পর্যায়ে নজর রাখেন এলাকার স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরাও। বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৬ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল পর্যায়ে উপস্থিত ছিলেন, ইউএনও খালিদ হোসেন ও এসিল্যান্ড আরাফাতুল আলম। ৫ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ বোর্ড সদস্যদের মধ্যে ছিলেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মজিদ সানা, ডিজি প্রতিনিধি ও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিত কুমার সরকার, প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। পরীক্ষা শেষে নিয়োগ বোর্ডের ফলাফল অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে গজালিয়া কালুয়া আলিম মাদরাসার সহকারী ইংরেজী শিক্ষক শামীম হোসেন প্রধান শিক্ষক শূন্য পদে প্রথম স্থান অধিকার করেন। প্রার্থীদের উপস্থিতিতেই নিয়োগ বোর্ডের পক্ষ থেকে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়। অংশগ্রহণকারী প্রার্থী সহ সর্বসাধারণের মধ্যে নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে পূর্ব থেকেই যে জল্পনা-কল্পনা কাজ করছিল ফলাফল শুনে তার অবসান হয়। অংশগ্রহণকারী প্রার্থী স্বপন কুমার জানান, এ নিয়োগে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হয়েছে। আমি এর আগে এত স্বচ্ছ নিয়োগ কখনো দেখিনি।

ইউএনও এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, যে কোন নিয়োগ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমি ইউএনও হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর এটাই প্রথম নিয়োগ। নিয়োগটি যাতে কোন ভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয় এবং অংশগ্রহণকারী কোন প্রার্থীর মধ্যেও কোন ক্ষোভের সৃষ্টি না হয় এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমি সবধরণের পন্থা অনুসরণ করেছি। নিয়োগ বোর্ডের সকলের সহযোগিতায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রভাব মুক্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছি এ জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি এবং সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। অনিয়ম ও দুর্নীতি মুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় ইউএনও এবিএম খালিদ হোসেনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সুধী ও সচেতন মহল।