প্রধান মেনু

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির বাণী

ঢাকা, ১২ আশ্বিন (২৭ সেপ্টেম্বর) : রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : ‘‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর জ্যেষ্ঠ কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমি তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম শেখ হাসিনা শৈশব থেকেই রাজনৈতিক সচেতনভাবে বেড়ে উঠেছেন। দেখেছেন পিতার নেতৃত্বে দেশ ও গণমানুষের রাজনীতি। ছাত্রাবস্থায় যুক্ত হয়েছেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে এক রকম বন্দি অবস্থায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটিয়েছেন। জাতির পিতার কন্যা হওয়া সত্ত্বেও শেখ হাসিনার জীবন কখনো মসৃণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন।

এ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। মা, বাবা, ভাইসহ আপনজনদের হারানো বেদনাকে বুকে ধারণ করে পরবর্তীতে ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লিতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে তাঁদের নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়। ১৯৮১ সালে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ’৯০-এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়, বিজয় হয় গণতন্ত্রের । ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। এ সময় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি এবং প্রতিবেশী ভারতের সাথে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জনকল্যাণে গৃহীত নানা কর্মসূচি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করা হয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এসে দক্ষতার সাথে সরকার পরিচালনা করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু ও রায়ের বাস্তবায়নসহ সমুদ্রে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত স্থলসীমানা নির্ধারণ তথা ছিটমহল বিনিময় চুক্তিসহ গণমানুষের কল্যাণে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতায় আসে এবং তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তিনি বদ্ধপরিকর।

বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে, কমছে দারিদ্র্যের হার। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলসহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি’র অর্জনের ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জনে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাসী। ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশে আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বমানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ জন্য তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নসহ দারিদ্র্য বিমোচনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এবং দেশের জন্য বয়ে এনেছেন বিরল সম্মান।

দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচিসহ বাংলাদেশ ব-দ্বীব মহাপরিকল্পনা (ডেল্টা প্লান ২১০০) গ্রহণ করেছেন। দেশ ও জনগণের জন্য তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মতোই গণমানুষের নেতা। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে তিনি শুধু দেশেই নন, বহির্বিশ্বেও অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত শেখ হাসিনা ত্যাগী ও মমতাময়ী, কিন্তু গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার আদায়ে আপসহীন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে- এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমি তাঁর নিজের ও পরিবারের সকল সদস্যের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, সুখ-সমৃদ্ধি ও অব্যাহত কল্যাণ কামনা করছি। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।