প্রধান মেনু

পাট নিয়ে চিন্তায় গাংনীর পাট চাষিরা

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনীঃ পাট কাটার মৌসুম শুরু হলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দিতে পারছেন না মেহেরপুরের গাংনীর পাট চাষিরা। অন্যদিকে সরকারী পাটকল বন্ধ হওয়ায় এবার সরকারীভাবে পাট কেনা হবে না। ফলে বেসরকারী জুটমিল ও ব্যবসায়িদের কবলে পড়ে পাটের ন্যায্যমুল্য থেকে বঞ্চিত হবেন বলে মনে করছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে অনেকেই গভীর নলকুপের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করে পাট জাগের ব্যবস্থা করছেন। তবে উৎপাদন খরচ উঠছে না। ফলে আগামীতে পাটচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন সিংহভাগ চাষি।

গাংনীর বিভিন্ন মাঠে দেখা যায়, কৃষকরা পাট কেটে জমিতে ফেলে রেখেছেন। কোনো কোনো কৃষক তার ক্ষেতের উৎপাদিত পাট নসিমনে করে ৩/৪ কিলোমিটার দূরে নিয়ে খাল-বা ডোবায় জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেক চাষিই এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন ক্ষেতের পাট কোথায় জাগ দেবেন। এ জন্য তারা পাট কেটে রাস্তার পাশে ও জমিতে আটি বেধে রেখে দিয়েছেন। কেউ কেউ গর্তে পাটের উপর মাটি চাপা দিয়ে জাগ দিচ্ছেন। কৃষি অফিস পলিথিন কাগজ ও ইট পাথর চাপা দেয়ার কথা বললেও উৎপাদন খরচ বেশী হবার ভয়ে চাষিরা কৃষি অফিসের পরামর্শ মানতে নারাজ।

এ উপজেলার কামারখালি গ্রামের পাটচাষি ছাদিমান জানান, তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। খাল, বিল ও ডোবা নালাতে পানির পরিমাণ খুবই কম। বাধ্য হয়েই অল্প পানিতে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে পাটের সোনালী রং কালচে বর্ণ ধারণ করে। যে রঙের কারণে বাজারে ভালো দাম মেলে না। তাই পাট নিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই। পাট বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। পাটকাঠি বিক্রি করে যদি কটা টাকা পাওয়া যায়।

হাড়াভাঙ্গার কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের নিচু জমিতে পানি থইথই করে। পাট কেটে ওই বিলে জাগ দেয়া হতো। বৃষ্টির অভাবে এবার খাল-বিল, ডোবা-নালায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে নিরুপায় হয়ে জ্জ কিলোমিটার দুরে পুকুর ও গর্তে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কিছু পাট পচানো হয়েছে তা বিক্রি করে লেঅকসান গুনতে হয়েছে। তিনি

আরো জানান, অনেকেই পাট চাষ করে পড়েছেন উভয় সংকটে। এখন না পারছেন কাটতে, না পারছেন জমিতে রাখতে। কেননা এখন ধান রোপনের সময় এসে গেছে। বামন্দী বাজারের বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ি কাউছার জানান, চলতি মৌসুমে তারা পাট ক্রয় করছেন। নদীর পানিতে জাগ দেয়া পাটের গুণগত মান ভাল হওয়ায় ১২০০ টাকা মন পাট কিনছেন। আর যে পাটের মান খারাপ তা কেনা হচ্ছে ১০০০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকা মন।

তিনি আরো জানান, সরকারী জুটমিল বন্ধ করায় এবার সরকার পাট ক্রয় ও মুল্য নির্ধারণ করতে নাও পারেন। এদিকে বেসরকারী জুটমিল মালিক সমিতিও কোন দাম নির্ধারণ করেনি। তার পরও পাট কেনা হচ্ছে। চাষিরা একটু সতর্কতার সাথে যত্ন করে পাট জাগ দিলে পাটের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে সেই সাথে ন্যায্য মুল্যও পাবেন চাষিরা।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম সাহাবুদ্দীন জানান, গেল বছর পাটের দাম পাওয়ায় চলতি মৌসুমে ১৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়। ফলনও বেশ ভাল। উপজেলায় দুই জাতের পাট চাষ করা হয়। এখন পাট কাটার উপযুক্ত সময় হলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক চাষি সময়মতো পাট কাটতে পারেননি আবার সঠিকভাবে সঠিকভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। চাষিদেরকে পাট জাগ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

অনেকেই অভিযোগ করছেন, পাটের মুল্য নেই। এ অঞ্চলের চাষিরা সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেন। কাদা মাটি ও কলা গাছ চাপা দিয়ে পাটের গুনগত মান নষ্ট করায় তারা পাটের দাম পাচ্ছে না। বারবার জানানোর পরও চাষিরা সেই সনাতন পদ্ধতিটিকেই বেছে নিচ্ছেন।