পরিবার যাদের করেছে পর গাংনীতে অধিকার বঞ্চিতরা বেছে নিচ্ছেন ভিক্ষাবৃত্তি

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী ,মেহেরপুরঃ আজিজুল হক।বয়স ৬০।গাংনীর জালসুকা গ্রামের এই বৃদ্ধের সংসারে রয়েছেন তিন ছেলে। সন্তানেরা সংসারী হওয়ার পর বৃদ্ধ পিতামাতার দেখভাল করেন না।বাধ্য হয়ে ভিক্ষা বৃত্তি বেছে নিয়েছেন। এদিকে কাজীপুরের অশিতিপর বৃদ্ধ রমজান আলী তিন কন্যা সন্তানের জনক। বিয়ের পর তারাও সংসারী। পিতামাতাকে দেখার সময় তাদের নেই। শুধু আজিজুল কিংবা রমজান নয়, তাদের মতো কয়েক হাজার বৃদ্ধ রয়েছেন তারা এখন সংসারের বোঝা। পারিবারিক সুবিধা বঞ্চিত হয়ে তারা ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছেন।ভিক্ষুকমুক্ত করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হলেও ভিক্ষুকদের সংখ্যা কমেনি।গাংনীর বিভিন্ন বাজার ও গ্রামে দেখা গেছে, বয়োভারে বৃদ্ধ নারী পুরুষ ভিক্ষা করছেন।এক বেলা খেয়ে না খেয়ে যে সব সন্তানদের বড় করেছেন তারা নিজেই সংসারী হবার পর পিতা মাতাকে ভরণ পোষন করেন না।রোগাক্রান্ত অবস্থায় ওই সব বয়স্কদের পেটের ভাত যোগাতে শেষ পর্যন্ত মানুষের দারে দারে ঘুরতে হচ্ছে।
এ উপজেলায় কতজন বৃদ্ধ রয়েছেন এ উপজেলায় সে পরিসংখ্যানও নেই সমাজ সেবা অফিসে।তবে প্রায় ১০ হাজার জন বয়স্ক ও বিধবা ভাতা পান।এ সুবিধাভোগির সংখ্যা নিতান্তই কম। ভিক্ষুকমুক্ত করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।ভিক্ষুকরা পেয়েছেন গাভী, ছাগল, বয়ষ্ক ও বিধাব ভাতার কার্ড।তবে এতে তাদের দুবেলঅ খাবার জোটেনা বলে জানিয়েছেন অনেক ভিক্ষুক। কেউ কেউ বলেছে ছাগল আর গরু চরালেই কি পেট চলে ? চাল ডালের ব্যবস্থা হবে কি করে? অনেকেই ছাগল গরু বিক্রি করে দিয়েছেন।
ভাটপাড়া গ্রামের আফসার আলী জানান, তিনি তিন কন্যা সন্তানের জনক।তাদের বিয়ে দিয়েছেন।ভিটে মাটি বিক্রি করে যাদের বিয়ে দিয়েছেন তারা এখন আর দেখেন না।বাধ্য হয়ে নিজে ভিক্ষা করেন আর স্ত্রী মনোয়ারা পরের বাড়িতে কাজ করেন। একদিন কাজে না গেলে তাদের মুখে ভাত জোটেনা।সন্তানেরা কোন ভরণ পোষনের দ্বায়িত্ব নেয়নি, অপরদিকে সরকার থেকে কোন সুবিধাও পাননি।বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে হচ্ছে।ভবানীপুরের সফের আলীর স্ত্রী কমেলা খাতুন (৭০) জানান, দু’মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর তারা যেমন দেখা শোনা করে না আবার এক ছেলে সেও বিয়ে করে সংসারী হবার পর ভরণ পোষন করে না।বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হয়। বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতা পান না।
তিনি আরো জানান, এখন একটু চলতে পারছেন কিন্তু কিছু দিন পর কি হবে সেটা কল্পনা করতে পারছেন না।একটি সুত্র জানায়, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান যে সব লোকের বয়োষ্ক এবং বিধাব ভাতা প্রদান করেছেন তাদের সিংহ ভাগই এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নয়।নিজ অনুগত ও দলীয় লোকজনের মনোতুষ্টির জন্য বয়োষ্ক না হলেও তাদেরকে বয়োষ্ক ও বিধবা প্রদান করা হয়েছে।গাংনী উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার তৌফিকুর রহমান জানান, চেয়ারম্যানদের প্রদেয় তালিকা অনুযায়ি বয়ষ্ক ও বিধাব ভাতা প্রদান করা হয়।এর মধ্যে কে পাওয়ার যোগ্য আর কে যোগ্য নয় সেটি দেখা সম্ভব হয়ে উঠে না। জেলা পর্যায়ে বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেন তিনি।