পঞ্চগড়ে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যাওয়া মা ফিরে এলো সন্তানের কাছে

এন এ রবিউল হাসান লিটন, রিপোর্টার, বোদা, পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যাওয়া মা রিমু আক্তার ফিরে এলো তার সন্তানের কাছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ১২ দিনের কন্যা শিশুকে পঞ্চগড়ের কামাতপাড়া এলাকায় রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় রিমু আক্তার। রিমু আক্তারকে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার জিজ্ঞাসাবাদ করেন। রিমু আক্তারের বাবা-মা পরিচয় মিলেছে। আগে রিমু বাবা আইবুল ইসলাম ও মা শিল্পী বেগমকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জানা যায়, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে শিশুটিকে দত্তক দিতে চেয়েছিলেন মা রিমু আক্তার। কিন্তু কেউ না নেয়ায় শিশুটিকে রাস্তায় রেখে পালিয়ে যান মা । বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে জেলা শহরের কামাতপাড়া এলাকায় অশোক চন্দ্র মদকের বাড়ির সামন থেকে ফুটফুটে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে শিশুটিকে রাখা হয়। শিশুটিকে দেখতে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন ও পুলিশ সুপার ইউসুফ আলী শিশুটিকে দেখতে হাসপাতালে যান। এ সময় জেলা প্রশাসক শিশুটিকে কোলে নিয়ে আদর করেন এবং রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
শিশুটিকে উদ্ধারের খবরে নিঃসন্তান দম্পতিরা দত্তক নিতে হাসপাতালে ভিড় করেন। শিশুটিকে নিজের সন্তানের মর্যাদা দিতে পুলিশ সুপারসহ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানান অনেকে। একই সঙ্গে শিশুটির নানা আইবুল ইসলাম এবং নানি শিল্পী বেগমও শিশুটিকে নিজেদের জিম্মায় নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশনে চার বছরের এক শিশুসহ রিমু আক্তারকে কাঁদতে দেখেন আলেমা খাতুন নামে এক গৃহবধূ। এ সময় নাম-পরিচয় কিছুই বলেননি রিমু। একপর্যায়ে রিমুকে আটোয়ারী উপজেলার মালিগা এলাকার বাসায় নিয়ে যান আলেমা খাতুন। নিজের সন্তানকে ফেলে আসার লজ্জা এবং ভীত হয়ে পড়ায় আলেমাকে কিছুই জানাননি রিমু। তিনদিন আলেমার বাসায় ছিলেন রিমু। এরই মধ্যে গণমাধ্যমে রিমু আক্তারের পরিচয় জানতে পেরে আলেমা আক্তার আবারও নাম-পরিচয় জানতে চান। একপর্যায়ে পুরো ঘটনা খুলে বলেন রিমু। পরে তাকে আটোয়ারী থানায় নিয়ে যান আলেমা। সোমবার দুপুরে আটোয়ারী থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে পঞ্চগড় সদর থানায় নিয়ে আসা হয়।
মা রিমু আক্তার বলেন, সোমবার পর্যন্ত শিশুটির বয়স ১৬ দিন। আমি একাধিক কারণে শিশুটিকে দত্তক দিতে চেয়েছিলাম। কেউ নিতে না চাইলে রাস্তায় ফেলে চলে যাই। এটি আমার ভুল হয়েছে। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।এখন আমি শিশুটিকে ফিরে পেতে চাই। আমি নিজেই তাকে লালন-পালন করবো। পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ঘটনার পর থেকে শিশুটির মাকে উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চলছিল। আটোয়ারী উপজেলার মালিগা এলাকায় আলেমা খাতুন নামে এক গৃহবধূর বাড়িতে ছিলেন রিমু। পরে আটোয়ারী থানা পুলিশের সহায়তায় রিমু আক্তারকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনিই শিশুটির মা, আইবুল ইসলাম শিশুটির নানা এবং শিল্পী আক্তার নানি বলে আমরা নিশ্চিত।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, স্বামীর সঙ্গে সাংসারিক টানাপোড়েনের কারণে মা রিমু আক্তার শিশুটিকে ফেলে যাওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তার কথা কিছুটা অসংলগ্ন। এরপরও শিশুটির মা যে রিমু এটি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জেলা প্রশাসকের কোলে সন্তানকে দেখে তার মাতৃত্ব জেগে উঠেছে। এজন্য এখন শিশুটিকে ফিরে পেতে চায় মা। আমরা তার কোলেই শিশুটিকে ফিরিয়ে দেব। তবে এজন্য আরও দু’একদিন হাসপাতালে শিশুটিকে রেখে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেখানে রিমু আক্তারসহ শিশুটির নানা নানিও থাকবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।