প্রধান মেনু

ন্যুনতম ২০ একর জমি প্রতিটি ভাটার দখলে সৈয়দপুরে এক ইউনিয়নেই ১৮ ইট ভাটা সিংহভাগ কৃষি জমি বিলীন হওয়ার পথে

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী  প্রতিনিধি ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নেই গড়ে উঠেছে প্রায় ১৮টি ইটভাটা। এসব ভাটার প্রায় প্রতিটিই ন্যুনতম ২০ একর জমির উপর গড়ে ওঠায় সিংহভাগ কৃষি জমি বিলীন হওয়ার পথে। পাশাপাশি ইটভাটা সংলগ্ন কৃষি জমিগুলোতে ভাটার তাপ ও বিষাক্ত ধোয়ার প্রভাবে আশাতিত ফলন হচ্ছেনা। তাছাড়া শীত মৌসুম আসার সাথে সাথে ইট তৈরীর মূল উপাদান মাটি কাটার ধুম পড়ে যায় আশেপাশের কৃষি জমি থেকেই। এতে জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে নেওয়ায় দিন দিন নষ্ট হয়ে আবাদ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কামারপুকুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের দু’পাশে ১২ টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এরপাশাপাশি ইউনিয়নের মধ্যে আরও প্রায় ৬টি ইটভাটা রয়েছে।

এসব ইটভাটায় এবারের শীত মৌসুমের ইট তৈরীর জন্য সদ্য আমন ধান কেটে নেওয়া জমি থেকে দেদারছে মাটি কাটা হচ্ছে। ইটভাটাগুলোর প্রায় প্রতিটিই ন্যুনতম ২০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলোর কোনটিই পরিবেশ আইন বা কৃষি জমি নষ্ট না করার নির্দেশনা মানছেনা। সম্পূর্ণ আবাদযোগ্য কৃষি জমিতে ইটভাটা করা হলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন বা ইউনিয়ন পরিষদের কোন তদারকি নেই। ফলে ভাটা মালিকরা যেভাবে ইচ্ছে কৃষি জমির মাটি কাটা সহ পরিবেশ দূষণ করে চলেছে। ইটভাটার তাপ ও বিষাক্ত ধোয়ার প্রভাবে আশেপাশের কৃষি জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হলেও কোন প্রতিফল পাচ্ছেন না। একারণে আশংকা দেখা দিয়েছে যে অচিরেই এ ইউনিয়নের সিংহভাগ কৃষি জমি ইটভাটাগুলোর গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। এদিকে ইটভাটাগুলো প্রতিবছর কি পরিমান ইট তৈরী করছে এবং এতে কত মাটি ব্যবহৃত হচ্ছে সে সংক্রান্ত কোন তথ্যই নেই ইটভাটার মালিকসহ প্রশাসনের কাছে। এর ফলে স্থানীয়ভাবে অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে সঠিক হিসেব না দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেয়াসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রয়োজনীয় প্রাপ্য ফি প্রদানেও করা হচ্ছে প্রতারণা। এতে পরিবেশ ও কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সাথে সাথে সরকারও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কামারপুকুর ইউনিয়নের এএনবি ইটভাটার মালিক হাজী নাজমুল হক এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার তিনটি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে দু’ুটি নিজস্ব এবং একটি ভাড়ায় নেওয়া। এই ইটভাটাগুলোতে কি পরিমান জমি ব্যবহৃত হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার সঠিক কোন হিসেবে নেই তার কাছে। এমনকি প্রতিবছর কত ইট উৎপাদন বা বিক্রি করেন তারও কোন হদিস নেই।এসময় তিনি মন্তব্য করেন যে, নিয়ম মেনে চললে দেশের কোন ইটভাটাই করা সম্ভব নয়। সব ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা করতে হয়। এক্ষেত্রে ইটভাটা মালিক সমিতিই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই পরিবেশ, কৃষি বিভাগ বা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা বা জেলা প্রশাসন কোন হস্তক্ষেপ করেনা এক্ষেত্রে। কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম লোকমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর, ডিসি অফিস ও কৃষি বিভাগ যেখানে কোন ব্যবস্থা নেয়না সেখানে আমরা আর কি করতে পারি। এমনিতে ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের তেমন কোন উৎস্য নেই।

ইটভাটাগুলো থেকে বার্ষিক যে ট্রেড লাইসেন্স বাবদ পাওয়া যায় তা বন্ধ হলে কীভাবে চলবে। আর কৃষকরা তাদের জমির মাটি বিক্রি করলে আমরাতো বাধা দিতে পারিনা। উপজেলা কৃষি অফিসার হোমায়রা মন্ডল জানান, কৃষি জমির মাটি ইটভাটায় দেয়া যাবেনা। তবে জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করলে সেখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারিনা। ইটভাটার কারণে চাষের ক্ষেত্রে কোন প্রকার বিরুপ প্রভাব পড়লে এবং সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।