প্রধান মেনু

নিহত প্রবাসী নারী কর্মী আবিরণের পরিবারের পাশে এমপি বাবু

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ॥ সৌদি আরবে প্রবাসী নারী কর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফেরেন পাইকগাছার রামনগর গ্রামের আবিরণ বেগম। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সৌদির অপরাধ আদালত নৃশংস এ হত্যাকান্ডের ঘটনার রায় দেয়। এ খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে আবিরণের বাড়ীতে ছুটে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু।

এ সময় এমপি বাবু আবিরণের পরিবারের প্রতি সহনুভুতি প্রকাশ করে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। একই সাথে সৌদি আদালতের এ রায় যাতে দ্রুত কার্যকর হয় সে ব্যাপারেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা জানান এমপি বাবু। পরে কবর জিয়ারত করার মাধ্যমে আবিরণের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সহ দলীয় নেতৃবৃন্দ। অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, এ রায়ের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ন্যায় বিচার পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে।

আমরা কেউ হয়তো আবিরণকে ফিরে আনতে পারবো না। কিন্তু আবিরণের পরিবার যাতে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে এ জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে একটি ঘর তৈরী করে দেওয়া হবে। এ ছাড়াও যে কোন প্রয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। উল্লেখ্য, আবিরণ বেগম উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের আনসার সরদারের মেয়ে। ৬ বোনের মধ্যে স্বামী পরিত্যাক্তা আবিরণ ছিল মেঝ। ছোট বোনদের লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারের ভরণপোষনের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালে পাশ্ববর্তী তালা উপজেলার জেঁঠুয়া গ্রামের দালাল রবিউল ইসলামের মাধ্যমে ঢাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে নারী কর্মী হিসেবে সৌদি আরব যায় আবিরণ।

২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রিয়াদের আজিজিয়ায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয় আবিরণ। তার মরদেহের ফরেনসিক প্রতিবেদনে হত্যাকান্ডের বিষয়টি আসে। আবিরণের মরদেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সহায়তায় হত্যা কান্ডের ৭ মাস পর ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর তার মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। দাফন করার সময় মৃতদেহের অসংখ্য স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায় এবং মৃত্যু সনদে মাডারের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। ওই সময় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না ও জনশক্তি ব্যুারো কর্মকর্তারা আবিরণের বাড়ীতে গিয়ে আর্থিক সহযোগিতা করেন এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেন।

এ ঘটনায় সৌদি আরবের অপরাধ আদালতে হত্যা মামলা হলে ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সুনানী হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সৌদি আরবের অপরাধ আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মামলার প্রধান আসামী গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানীর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত এবং সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকান্ড সংগঠনের দায়ে কেসাস বা জানের বদলে জানের রায় প্রদান করে।

এ ছাড়া মামলায় গৃহকর্তা বাসেম সালেমের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডের আলমত ধ্বংস এবং আবিরণ বেগমকে নিজ বাসার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কাজে পাঠানো ও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করার অভিযোগে ৩ বছর ২ মাসের কারাদন্ডাদেশ, সেই সঙ্গে ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা দিতে বলা হয়।

মামলার তৃতীয় আসামী সৌদি দম্পত্তির ছেলেকে ৭ মাস কিশোর সংশোধনাগারে থাকার আদেশ দেয়। সৌদি আরবে কোন বাংলাদেশী হত্যার ঘটনায় এই প্রথম কারো মৃত্যুদন্ডের রায় হলো।