নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সমুদ্রে মৎস্য আহরণ বন্ধে মনিটরিং জোরদার করতে হবে — মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

ঢাকা, ২৮ বৈশাখ (১১ মে): বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মৎস্য আহরণ বন্ধে মনিটরিং জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
আজ সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সকল প্রকার নৌযান দিয়ে যেকোনো প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক সভায় নিষিদ্ধকাল বাস্তবায়নে সম্পৃক্তদের এ নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সমুদ্রগামী সকল প্রকার মৎস্য আহরণকারী নৌযান ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। নিষিদ্ধকালে আমাদের সমুদ্রসীমায় কোনোভাবেই যেন বিদেশি নৌযান প্রবেশ করে মাছ ধরতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রায় সমপরিমাণ জলসীমা অর্জিত হয়েছে। এ জলসীমায় পূর্বের চেয়ে গতবছর নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, র্যাবসহ অন্যরা মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকাল বাস্তবায়নে অনেক সাফল্য দেখিয়েছে। এ সাফল্য এবারো ধরে রাখতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন এলাকায় বরফকল বন্ধ রাখা গেলে এবং কঠোরভাবে বাজার তদারকি করতে পারলে নিষিদ্ধ সময়ে মৎস্য আহরণ বন্ধ করা যাবে। এজন্য সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা, বাজার ও বরফকল কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে।
শ ম রেজাউল করিম আরো বলেন, সামুদ্রিক জলসীমায় ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখলে সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্রে মাছ বড় হলে মৎস্যজীবীরাই লাভবান হবেন। ফলে তাদের স্বার্থেই নিষিদ্ধকালে মৎস্য আহরণে তাদের নিবৃত্ত করতে হবে। মাছের উৎপাদন বাড়লে দেশের মানুষের মাছের চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। এজন্য দেশের মৎস্য খাতকে সম্মিলিতভাবে পরিচর্যা করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, নিষিদ্ধকাল বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করা হবে। তাদের মাধ্যমে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে। সমুদ্রে মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকাকালে সে সব এলাকার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের শ্রমিকসহ অন্যদের সরকারি সহায়তার আওতায় আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ৬৫ দিন সমুদ্রে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালে মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি তৎপর থাকার জন্য এ সময় নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর সভাপতিত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল, আব্দুল কাইয়ূম ও মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (ব্লু ইকোনমি) ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারগণ, সমুদ্র উপকূলীয় ১৪ জেলার জেলা প্রশাসকগণ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, র্যাব, বন বিভাগ এবং মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ, মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশন ও মৎস্যজীবী সমিতির প্রতিনিধিগণ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, উপকূলীয় বিভাগ চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনার ১৪টি জেলার ৬৭টি উপজেলা ও চট্টগ্রাম মহানগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধের এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। নিষিদ্ধকাল বাস্তবায়নকালে ৩ লাখ ১১ হাজার ৬২ জন সমুদ্রগামী জেলের জন্য ১ম ধাপে ১৭ হাজার ৪১৯ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এ সময় ভিজিএফ-এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকার উপকরণ সহায়তা প্রদান করবে।